নতুন সমস্যায় জাপানের যুবসমাজ
জাপানের জনসংখ্যাবিষয়ক আলোচনা হলেই এত দিন সবার আগে আসত দেশটির জনগণের দীর্ঘায়ুর বিষয়টি। দীর্ঘায়ু জনগোষ্ঠী যে রাষ্ট্রের বোঝা হতে পারে সেটা প্রথম প্রমাণিত হয়েছিল জাপানেই। এখনো বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রটির খরচের অন্যতম খাত বৃদ্ধদের পেনশন এবং বয়স্ককালীন বিভিন্ন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়।
এ ছাড়া জাপানে কম জন্মহারের বিষয়টিও আলোচিত দীর্ঘদিন ধরেই। এর মধ্যেই জাপানের যুবসমাজের নতুন এক সমস্যা আবিষ্কৃত হয়েছে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, তরুণ-তরুণীদের প্রায় অর্ধেকই নাকি শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ অনভিজ্ঞ।
জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের সমীক্ষাভিত্তিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৭ সাল থেকে জাপানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছে।
নতুন এ গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানের ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী অবিবাহিতদের মধ্যে ৪২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ নারীর শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা নেই। আবার এই অবিবাহিতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০ শতাংশ নারী কোনো সম্পর্কেও জড়িত নয়। এদের অনেকেরই বিপরীত লিঙ্গের সংস্পর্শে আসা বা জড়িয়ে ধরারও অভিজ্ঞতা নেই।
গত বছরের জুনে জাপানের আট হাজার ৭৫৪ জন অবিবাহিত নারী-পুরুষ এবং ছয় হাজার ৫৯৮ বিবাহিত দম্পতির মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা চালায়। আর গত বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে ২০১০ সালে একই রকম এক গবেষণায় দেখা যায় অবিবাহিতদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ নারীর শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা ছিল না। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষকদের মতে, ২০ বছর বয়সী জাপানিদের মধ্যে একক নারী-পুরুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অথচ এ সময়ই নারীদের মধ্যে সন্তানধারণের ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অবিবাহিত জাপানি যুবক-যুবতীদের প্রায় ৯০ শতাংশই জানায় ভবিষ্যতে কোনো একসময় তারা বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হবে। তবে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া দুই হাজার ৭০৬ পুরুষের ৩০ শতাংশ এবং দুই হাজার ৫৭০ নারীর ২৬ শতাংশ জানায়, তারা এখনই কোনো সম্পর্কে আগ্রহী নয়।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৯ বছর ধরে সংসার করছে এমন দম্পতির সন্তানের গড় সংখ্যা ১ দশমিক ৯৪। এ ছাড়া সমীক্ষায় নারী ক্ষমতায়নের তথ্যও উঠে এসেছে, প্রথম সন্তান জন্মের পর দেশটির ৫০ শতাংশ নারী আবার কাজে ফিরেছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এমন গবেষণার ফলাফলে খুশি হবেন না নিশ্চয়ই। আবে প্রশাসন জাপানের জনসংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে এই সমীক্ষা জাপানিদের মধ্যে এই ব্যাপারে উদাসীনতার কথাই জানায়।
জাপান টাইমস জানায়, ২০২৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১.৮ শতাংশে নিতে চায় জাপান সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকেই কিউপিডের (প্রেমের দেবতা) ভূমিকা পালন করতে হবে।