আসছে পানামা পেপার্সের দ্বিতীয় কিস্তি
কর ফাঁকি দিয়ে বেনামে সম্পদ গড়ার অভিযোগে রাজনীতিবিদসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঙ্গনের প্রভাবশালীদের বেকায়দায় ফেলা পানামা পেপার্সের দ্বিতীয় কিস্তি আসছে। আগামী ৯ মে গোপন এই নথিগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্সিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে)।
ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্স থেকে অনুসন্ধান করা যায় এমন আরো দুই লাখ ‘অফসোর কোম্পানির’ বিভিন্ন তথ্য আগামী ৯ মে গ্রিনিচ সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশ করা হবে বলে আইসিআইজের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। এসব তথ্য প্রকাশিত হলে বেনামে পরিচালিত বিভিন্ন অফসোর কোম্পানি এবং তাদের আসল মালিকদের নামের একটি বড় তালিকা সবার সামনে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রয়টার্সের তথ্যমতে, পানামা পেপার্স হচ্ছে ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং করপোরেট নথি আকারে সংরক্ষিত আছে। আইনবিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছে থাকা এসব তথ্য প্রকাশ করেছিল আইসিআইজে।
গত মাসে প্রকাশিত ওই তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে, যাঁরা ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করে গেছেন।
আইসিআইজে চলতি মাসের শুরুর দিকে পানামার আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে অফসোর লেনদেন সংক্রান্ত এক কোটি ১০ লাখের বেশি নথি ফাঁসের কথা জানায়, যেগুলোকে একত্রে পানামা পেপার্স নাম দেওয়া হয়।
আর পুরো বিষয়টিকে বলা হচ্ছে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি। এসব নথি থেকে প্রথম কিস্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বেরিয়ে আসে, বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে কীভাবে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
গত ৪০ বছর ধরে মোসাক ফনসেকা রাজনীতিবিদসহ তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে। এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন ওই ব্যক্তিরা।
এসব নথি ফাঁসের পর জনদাবির মুখে এরই মধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া স্পেনের শিল্পমন্ত্রী ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চিলেচ্যাপ্টারের প্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে প্রথম মোসাক ফনসেকার এসব অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস করে জার্মান পত্রিকা সুইডয়চে সাইটং।
পত্রিকাটির সাংবাদিকরা ‘অফসোর লেনদেন’ সংক্রান্ত লাখ লাখ নথি প্রকাশের আগে এর সব সত্য কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন অনুধাবন করে তা ওয়াশিংটনভিত্তিক আইসিআইজে দেয়। আইসিআইজে এসব নথি নিয়ে অনুসন্ধানের পর এপ্রিলের শুরু থেকে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকাসহ অনেকেরই লেনদেন সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে।
পানামা পেপার্স জনসমক্ষে প্রকাশ নিয়ে আইসিআইজে বলছে, জনসমক্ষে উন্মুক্ত হলে এর ব্যবহারকারীরা এসব তথ্য খুঁজে দেখতে পারবেন এবং হাজার হাজার অফসোর কোম্পানির নেটওয়ার্কটি চোখের সামনে স্পষ্ট করতে পারবেন। এমনকি মোসাক ফনসেকার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে কোম্পানিগুলোর আসল মালিকদের নামও জানতে পারবেন।
লাখ লাখ কোম্পানির তথ্য যেন ‘তথ্যের আবর্জনা’ না হয় সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংস্থাটি। শুধুমাত্র মূল করপোরেট তথ্যগুলোই এতে প্রকাশিত হবে। কোনো অফসোর কোম্পানির আসল মালিকের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন, ব্যাংকের হিসাব ও আর্থিক লেনদেন, ই-মেইল, পাসপোর্ট ও টেলিফোন নম্বরসহ এ রকম কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছে আইসিআইজে।