ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেবে বন্যপ্রাণী!
ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক সপ্তাহ আগেই তা ‘বুঝতে পারে’ বন্যপ্রাণীরা। এসব প্রাণীর গতি/চলাচল শনাক্ত করতে কিছু ক্যামেরা স্থাপন করে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোতে সাশ্রয়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। গতকাল মঙ্গলবার একদল বিজ্ঞানী এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা জানান, অ্যামাজন বনাঞ্চলের পেরুর একটি অংশে বেশ কিছু ক্যামেরা স্থাপন করা হয়, ২০১১ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন সপ্তাহ আগে বন্যপ্রাণীর আচরণ বা গতিবিধি এসব ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়। ভূমিকম্পের আগে ২৩ দিনের সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন গড়ে পাঁচ বা তার চেয়ে কম প্রাণীর উপস্থিতি দেখতে পান। এর আগে তাঁরা একই জায়গায় পাঁচ থেকে ১৫টি প্রাণী দেখতে পান। ভূমিকম্পের আগের সাতদিনের পাঁচদিনই তারা কোনো প্রাণীর চলাচল দেখতে পাননি।
সমীক্ষার লেখকরা বলছেন, বৃষ্টিপ্রধান এই বনাঞ্চলে এটা খুবই অস্বাভাবিক। ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রি অব দি আর্থ জার্নালে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ছিল, প্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে, তবে এখন পর্যন্ত প্রাণীদের আচরণের পরিবর্তন নিয়ে সমর্থনযোগ্য কোনো প্রমাণ ছিল না। তাঁরা বলেন, ‘যতদূর আমরা জানি, একটি ভূমিকম্প ঘিরে এই প্রথম ঘট্নাটি ক্যামেরায় ধরা পড়ল।’ ব্রিটেনের অ্যাঙ্গিলা রাসকিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও সমীক্ষা প্রতিবেদনটির মূল লেখক র্যাচেল গ্র্যান্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে র্যাচেল গ্র্যান্ট বলেন, ‘ভূমিকম্পের বিশ্বাসযোগ্য পূর্বাভাসের জন্য প্রাণিকুলের সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। উন্নয়নশীল ও ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোতে এ ব্যবস্থা ব্যবহার করে যেতে পারে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটা সাশ্রয়ী ও সহজসাধ্য। এতে কেবল একজনকে দরকার, যিনি প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন। কোনো উপগ্রহের প্রয়োজন নেই।’
ভূমিকম্পের সপ্তাহ দুয়েক আগে বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনও রেকর্ড করেছেন। ভূকম্পন শুরুর আগে আগে ভূপৃষ্ঠের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, এ কারণেই এসব পরিবর্তন হয়। এতে করে রক্তে সেরোটনিনের (৫-হাইড্রোক্সিট্রিপ্টামিন, কোনো প্রাণীর বৃদ্ধি, প্রজনন ও মেজাজের ওঠানামা বা ভালো-খারাপ এর ওপর নির্ভর করে) পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে প্রাণী বা মানুষের অস্থিরতা, অতি-তৎপরতা ও উৎকণ্ঠার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পেরুর ওই ভূমিকম্প সংঘটনের আটদিন আগে এর উৎপত্তিস্থলের চারপাশের বায়ুমণ্ডলে বড় মাত্রার পরিবর্তন হয়। একই সময় প্রাণীর নড়াচড়া লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়।