‘হংকং অস্থিরতার’ মধ্যে বিশ্বকে সামরিক সক্ষমতা দেখাল চীন
সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ও সুসজ্জিত সেনাদের বিপুল প্রদর্শনীর মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে চীন। আজ মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানান, চীন আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের ওপর জোর দেবে।
চার মাস ধরে চীনের আওতাধীন হংকংয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মাঝেই এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি উদযাপন করছে চীন। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধসহ কঠিন সব সমস্যাও মোকাবিলা করছে দেশটির সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
কুচকাওয়াজ ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের বিরাট আয়োজনের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে গোটা বেইজিং। বাছাইকৃত ব্যক্তিরাই এ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার অনুমতি পান। এদিন অন্যান্য নগরবাসীকে বাড়িতে অবস্থান করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। এমনকি কুচকাওয়াজ চলাকালে জানালায়ও উঁকি দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয় বেইজিং পুলিশ।
জাতীয় দিবসে কুচকাওয়াজটিতে তিয়েনআনমেন স্কয়ার থেকে সেন্ট্রাল বেইজিংমুখী প্রধান সড়কের কয়েক মাইলজুড়ে মানুষে ঠাসা ছিল। এতটাই ভয়াবহ অবস্থা যে একটি সংবাদপত্রের অনলাইনে লোকজনকে বাসায় গিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়। পত্রিকাটির খবরে পাঠকদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘হেঁটে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে যেতে পারবেন না, সামনে একটুও এগোনোর জো নেই।’
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এ কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছে; ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং ১৬০টি এয়ারক্রাফট আকাশে উড়বে।
কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও চীনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নায়ক মাও সে তুংয়ের মতো ছাই রঙয়ের কোর্টে মঙ্গলবার সকালে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বিপুল গণসমাবেশের বক্তৃতায় শি জিনপিং বলেন, ‘চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রক্ষাকবচের মতো কাজ করতে হবে।’
এ সময় দুই জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হু জিনতাও এবং অপর সাধারণ সম্পাদক জিয়াং জেমিন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র, শ্রমিক ও অন্যান্য পেশাজীবী বেসামরিক নাগরিকদের অংশগ্রহণে আরেকটি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানেরও কথা রয়েছে। গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানসূচিতে এমনটি বলা হয়। বেসামরিক নাগরিকের কুচকাওয়াজেও বাছাইকৃতরাই অংশ নেবেন বলে জানায় রয়টার্স।
ওই অনুষ্ঠানসূচিতে সামরিক কুচকাওয়াজ শেষে শান্তির প্রতীকায়নে ৭০ হাজার কবুতর ওড়ানোর কথাও জানানো হয়। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোঝলমলে হয়ে উঠবে বেইজিং। আলোকসজ্জায় ব্যাপক চমকের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।
শি জিনপিং একটি খোলা জিপে করে সারি সারি মিসাইল বহনকারী ট্রাকসহ অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত ট্রাক ও সামরিক কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় হেলমেট পরিহিত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে লক্ষ করে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘হ্যালো, নেতা! জনগণের সেবা করুন।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যালো কমরেডস।’
কমিউনিস্ট বাহিনী রক্তাক্ত একটি গৃহযুদ্ধে জয় পাওয়ার পর ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুং বা চেয়ারম্যান মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন।