ভারতের সাবেক বিচারপতিই করেন পুত্রবধূকে নির্যাতন!
বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ফেলে দেওয়া হয় সোফার ওপরে। সেখানে চলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। রেগে ফুঁসে উঠছেন নির্যাতনকারীরা। সেখানে মাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে ছোট্ট শিশু। তাতেও মন গলেনি নির্যাতনকারীদের। ফেলে দেওয়া হয় মেঝের ওপরে। একদিকে শিশু কাঁদছে, অন্যদিকে নির্যাতন করা হচ্ছে তার মাকে।
এই নির্যাতনকারীরা আর কেউ নন, ভারতের হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি রামমোহন রাও, তাঁর স্ত্রী নুটি দুর্গা জয়লক্ষ্মী ও তাঁদের ছেলে নুটি বশিষ্ঠ। আর নির্যাতনের শিকার রামমোহন রাওয়ের পুত্রবধূ সিন্ধু শর্মা, অর্থাৎ নুটি বশিষ্ঠের স্ত্রী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এই লোমহর্ষক নির্যাতনের দুটি ভিডিও এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর তা দেখে হতবাক হয়ে পড়েছে অন্তর্জালবাসী। বিশেষ করে সাবেক বিচারপতির এমন উগ্র আচরণ দেখে সবার মনে প্রশ্ন জাগছে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যার কলম সবার আগে জেগে ওঠার কথা, তিনিই কি না একজন নির্যাতক!
পুলিশ জানিয়েছে, রামমোহন রাও হায়দরাবাদ হাইকোর্ট ও মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন।
নির্যাতনের শিকার সিন্ধু শর্মা দাবি করছেন, ‘মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুক দিতে পারেননি তাঁর বাবা। সে কারণে শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে এভাবে নির্যাতন করা হতো।’
এর মধ্যেই নিজের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন সিন্ধু শর্মা। গত এপ্রিলেই অভিযোগ করেন তিনি।
One of the videos of the assault pic.twitter.com/ffpGSt3UqA
— Dhanya Rajendran (@dhanyarajendran) September 20, 2019
নির্যাতনের পর সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে হায়দরাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সিন্ধু। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বলেছেন নির্যাতনের কথা।
এর ভিত্তিতে সিন্ধুর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ, ৩২৩ ও ৪০৬ ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।
তবে শিশু সন্তানদের কথা চিন্তা করে প্রথমে এ নির্যাতনের কথা সামনে আনতে চাননি সিন্ধু। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি অভিযোগ জানাতে চাইনি। আমার চার বছর ও দুই বছরের দুটো মেয়ে রয়েছে। চেয়েছিলাম ওরা বাবার ভালোবাসা পাক, সবকিছু মিটে যাক। কিন্তু তা হয়নি। আমার মেয়ে দুটোকেও ওরা আটকে রেখেছে।’
মেধাবী ছাত্রী সিন্ধুর সঙ্গে হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রামমোহন রাওয়ের ছেলে নুটি বশিষ্ঠের বিয়ের পর প্রতিটা দিনই ছিল সিন্ধুর কাছে যন্ত্রণার। শ্বশুর ছাড়াও স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে দিনের পর দিন।
সিন্ধু জানান, অত্যাচার চরম আকার নেয় গত এপ্রিলে। প্রায় প্রতি রাতেই কীভাবে তাঁর ওপর অত্যাচার চালানো হতো। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও সামনে এনেছেন তিনি। তাতে দেখা গেছে, দুই মেয়ের সামনেই মারধর করা হচ্ছে সিন্ধুকে। মেয়েরা সামনে চলে আসলে তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন সিন্ধুর স্বামী।
— Dhanya Rajendran (@dhanyarajendran) September 20, 2019
সিন্ধু দাবি করে বলেন, ‘আমার শাশুড়ি প্রতিদিন আমাকে হেনস্থা করতেন। আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হতো। লজ্জা ঢাকতে দেওয়া হতো বিছানার চাদর।’
২৬ এপ্রিল শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন সিন্ধু। তারপরের দিনই সিন্ধু ও তাঁর পরিবার নারী নির্যাতনের মামলা করেন। তখন তাঁর শারীরিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। সিন্ধু জানান, হাসপাতাল থেকে ফিরে শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়েছিলেন তিনি। তাতেও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে খুব ছোট। একজন এখনো বুকের দুধ খায়। ওদের উদ্ধার করুন।’
পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক বিচারপতির বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটলেও টের পায়নি কেউ। আইনের চোখে শুধু নয়, মানবিকতার ক্ষেত্রেও এটি অনেক লজ্জাজনক ঘটনা বলে জানিয়েছে পুলিশ।