সৌদি আরবে সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির দুটি তেলক্ষেত্রে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার সাংবাদিকদেরকে জানান, এখানে সেনা মোতায়েনের ধরন হবে ‘আত্মরক্ষামূলক’। তবে কত সংখ্যক সেনা পাঠানো হচ্ছে সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি আরো জানান, দুটি দেশের মধ্যেকার সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সৌদি আরবের আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে মার্কিন বাহিনী।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় খাতের প্রতিষ্ঠান আরামকো পরিচালিত দুটি তেল উত্তোলন ক্ষেত্রে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরানের মদদপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞার’ ঘোষণা দেন। তবে তিনি সামরিক সংঘাত এড়াতে চেয়েছিলেন বলে জানান। ট্রাম্প আরো জানান, নতুন নিষেধাজ্ঞার শর্তসমূহে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির নিজস্ব তহবিলের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে।
পেন্টাগনের ভাষ্য
মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড জুনিয়রকে পাশে রেখে শুক্রবার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন মার্ক এসপার। এই সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক (মডারেট) আখ্যা দিয়ে জেনারেল ডানফোর্ড জানান, এতে সৈন্যসংখ্যা হাজার ছাড়াবে না। তবে কী কী ধরনের সেনা এই বহরে থাকবে তাও নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।
একজন সাংবাদিক মার্ক এসপারের নিকট জানতে চান, ইরানে সরাসরি হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে কি না? জবাবে মার্ক বলেন, ‘আমরা এখনই আসলে সে জায়গাটায় যাইনি।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে এ কথা বলা হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের আবকাইক ও খুরাইস দুটি তেলক্ষেত্রে হামলা চালানো হয়। এতে তেলের বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়ে। গত বুধবার সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ড্রোন হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে। তারা জানায়, ইরানের জড়িত থাকার বিষয়ে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। তবে ড্রোন ঠিক কোন জায়গা থেকে উড্ডয়ন করেছে তা জানাতে পারেনি সৌদি আরব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে দায়ী করছে। মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, এ হামলায় ইরানের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।
তবে ইরান এতে জড়িত থাকার কথা শক্তভাবে অস্বীকার করে আসছে। তবে আঘাত হলে সমুচিত জবাবের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
এর আগে ২০০৬ সালে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আবকাইক তেল পরিশোধনাগারে আল-কায়েদার আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
সৌদি আরবের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একের পর এক রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হুতিরা। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন সৌদি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
২০১৫ সালের মার্চে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা দখলে নিলে দেশটিতে সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। হুতিরা ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ্রাব্বাহ মানসুর হাদিকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
এরপরই হাদি সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো জোট বেধে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সৌদি জোট ইয়েমেনে হামলা করার পর থেকে অন্তত সাত হাজার ২৯০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষেরই মানবিক সহায়তা অথবা নিরাপত্তা প্রয়োজন। এদের মধ্যে এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।