কেন ন্যাড়া হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিকরা?
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ জনসমক্ষে মাথা ন্যাড়া করে ফেলছেন বিরোধী দলের পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি)। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন দেশটির বিরোধী দলের নেতা হয়াং কিও-আহন।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে দলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে মাথা কামিয়ে ফেলেন কিও-আহন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত এক পরিবারের সদস্যকে ন্যায়বিচারবিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই সরকারে বিরুদ্ধে এমন প্রতিবাদ শুরু করেছে বিরোধী দল।
চো কাক নামের ওই মন্ত্রীকে নিয়োগের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে দুজন নারী এমপি তাঁদের মাথামুণ্ডন করেন।
তাঁদের দাবি, নবনিযুক্ত মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে নতুবা প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনকে তাঁকে বরখাস্ত করতে হবে।
কেন এমন প্রতিবাদ?
সাবেক আইনবিষয়ক অধ্যাপক ও প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহচর কাক গত সপ্তাহে ন্যায়বিচারবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
কিন্তু সমালোচকদের ক্ষোভ কাকের পরিবারের বিরুদ্ধে শিক্ষাসংক্রান্ত জালিয়াতি ও অর্থসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ থাকার পরেও তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন মুন।
কাকের স্ত্রীও একজন আইনের অধ্যাপক। তাঁর বিরুদ্ধে নকল নথিপত্র তৈরি করে নিজের মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া কাকের এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক তহবিলে বিনিয়োগ করার অভিযোগও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে কাকের বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত শুক্রবার এক শুনানিতে চো মেয়ের ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় ‘তরুণ প্রজন্মের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন’। তবে চো কাক জানিয়েছেন, বিচার ব্যবস্থা সংশোধন করতে চান তিনি।
কাকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাঁর নিয়োগের বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জানান, কেবল অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কাউকে নিয়োগ না দেওয়াটা খারাপ উদাহরণ হয়ে যেত।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরেই দূর্নীতি নিয়ে বেশ শোরগোল চলছে। সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ সুবিধা ভোগ করছেন, এমন অভিযোগে জনমনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান সরকারের আগের সরকারকে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার কারণে বর্তমানে জেল খাটছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিয়ুন-হাই।
কেন এই মাথামুণ্ডন?
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ন্যাড়া হওয়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো। এটাকে দেশটির এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী প্রথাই বলা চলে।
১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে দেশটি সামরিক স্বৈরশাসকের অধীনে থাকার সময় প্রতিবাদস্বরূপ নিজেদের মাথার কামিয়ে ফেলতেন বিদ্রোহীরা।
গত কয়েক দশকে বহুবার একই পন্থায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজনীতিক ও অন্যরা।
গোপন ক্যামেরায় পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হাজার হাজার নারী বিক্ষোভ করেন। অপরাধীরা নারীদের অজান্তেই পাবলিক প্লেসে লুকানো ক্যামেরা দিয়ে নারীদের ছবি ধারণ করার প্রতিবাদস্বরূপ মাথামুণ্ডন করেন অনেক নারী।