মতের মিল না হওয়ায় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে সরালেন ট্রাম্প
আফগানিস্তান, ইরানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতের মিল না হওয়ায় এবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে সরিয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘গত রাতে আমি জন বোল্টনকে জানিয়েছি যে, হোয়াইট হাউজে তাঁর সেবার আর প্রয়োজন নেই। আমি তাঁর অনেক নীতির সঙ্গে কঠিনভাবে দ্বিমত পোষণ করেছি।’
‘আমার প্রশাসনের ব্যাপারেও তাঁর সঙ্গে আমি অনেক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমি তাঁকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছি এবং তিনি আজ সকালে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন’, যোগ করেন ট্রাম্প।
যদিও জন বোল্টন বলছেন ভিন্ন কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইট করার কিছু পরই নিজের এক টুইট বার্তায় জন বোল্টন জানান, রাতে তিনি নিজেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁকে বলেছেন, সকালে এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।
জন বোল্টন ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিয়োগ দেওয়া তৃতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। মাইকেল ফ্লিন ও এইচ আর ম্যাকমাস্টারকে সরিয়ে দেওয়ার পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে নিয়োগ পান বোল্টন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথা ছিল, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে থাকবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। ঠিক তার দুই ঘণ্টা আগে জন বোল্টনের রফাদফার ঘোষণা এলো।
বিবিসি হোয়াইট হাউসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ সামলাতে পারেন চার্লস কুপারম্যান। তিনি জন বোল্টনের সহকারী ছিলেন।
হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। জন বোল্টনের অধীনে হোয়াইট হাউসে একটি আলাদা সত্ত্বা তৈরি হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ‘তিনি (জন বোল্টন) হোয়াইট হাউসের বাকি অংশ থেকে আলাদাভাবে কাজ করতেন।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘জন বোল্টন কোনো সভায় অংশ নিতেন না এবং নিজের মতেই চলতেন।’
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএসকে হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র বলেছে, ‘বোল্টন নিজের মতামতকেই অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি কখনো প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চাননি, ‘আপনার কোনো অগ্রাধিকার আছে কি?’”
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিবিএসকে জানান, জন বোল্টনের কাজের ‘পথ ও পদ্ধতির’ কারণে হোয়াইট হাউসের অনেকেই তাঁর প্রতি মনোক্ষুণ্ণ ছিলেন, এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও নাখোশ ছিলেন।
মাত্র কয়েকদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানের তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠির সঙ্গে শান্তি আলোচনা বাতিল করে দিয়েছেন। জন বোল্টন ক্যাম্প ডেভিডে এই ধরনের আলোচনার বিরুদ্ধে ছিলেন।
এমনকি ইরান, রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পরামর্শের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বিমত ছিল। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক আলোচনার সময় জন বোল্টন উপস্থিত ছিলেন না।
জন বোল্টন ‘যুদ্ধবাজ’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। এক সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিসে মজা করে বলেছিলেন, ‘এমন কোনো যুদ্ধ নেই যেটা জন পছন্দ করেন না।’
এই বছরের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে মার্কিন বৈদেশিক-নীতি ব্যর্থ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সরিয়ে কীভাবে সহজে অন্য কাউকে আনা যায় এ ব্যাপারে জন বোল্টন তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।