ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবে এমপিদের ‘না’
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হেরে যাওয়ার পর আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবেও বিরোধীদের কাছে হেরে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এর আগে গতকাল বুধবার এক ভোটাভুটিতে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটবিরোধী পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি)। জনসনের নিজ দলের ২১ এমপি, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও আছেন, এই ভোটাভুটিতে সরকারকে হারাতে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন। ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, তিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনবেন। আগামী ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ, যেটি ব্রেক্সিট হিসেবে পরিচিত, তা কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে, কোন চুক্তিতে সেই বিচ্ছেদ হবে, এ নিয়েই এখনো চলছে আলোচনা। তবে এই বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, নির্ধারিত তারিখেই ব্রেক্সিট কার্যকর করার ব্যাপারে অনড় থাকার কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
কিন্তু বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের জন্য ‘বোকাটে খেলা খেলছেন’ বলে অভিযোগ তোলেন। গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর সরকারবিরোধীদের সামনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে বিল আনার সুযোগ তৈরি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে করবিন জানান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচন দিতে চাইলে তাতে সমর্থন দেবে তাঁর দল। তবে তার আগে অবশ্যই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে বিলটি পাস হতে হবে।
এরপর পার্লামেন্টে ৩২৭-২৯৯ ভোটে পাস হয় চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর বিল। বিলটি পাস হওয়ায় ইইউর সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না আসতে পারলে ব্রেক্সিটের তারিখ ৩১ অক্টোবর থেকে পেছাতে বাধ্য হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব পার্লামেন্টে উত্থাপন করলে এর তীব্র বিরোধিতা করেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের পাঁয়তারা বলে উল্লেখ করেন।
আর বরিস জনসনের সমর্থক এমপিরা দুই বছর ধরে আগাম নির্বাচনের জন্য গলা ফাটানো এমপিরদের এখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার তুমুল সমালোচনা করেন।
পার্লামেন্টে বরিস জনসন চেয়েছিলেন এমপিরা যেন ১৫ অক্টোবর আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবে সম্মত হন। এর পক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি ছিল চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর বিল পাস হওয়ায় কোনো ধরনের আলোচনার পথ খোলা রইল না।
আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব পাস করানোর জন্য পালার্মেন্টের দু-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগত বরিস জনসনের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ২৯৮ ভোট, অন্যদিকে এর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৫৬টি। যার ফলাফল, ১৩৬ ভোট কম পড়ায় প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায়।
লেবার পার্টির সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, দলটি ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও দলের তিনজন এমপি আগাম নির্বাচনের পক্ষে এবং ২৮ জন এমপি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
এর আগে একদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধাপ পার করে পার্লামেন্টে পাস হয়ে যায় বিরোধী দল ও ২১ বিদ্রোহী টোরি এমপির সমর্থনপুষ্ট চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর বিল। আগামী সপ্তাহেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে বলেই এতো তাড়াহুড়ো। বিলটি এখন যাবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে।
এদিকে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব পার্লামেন্টে নাকচ হওয়ার পর বিরোধী দলের নেতা করবিনের সমালোচনা করে বরিস জনসন বলেন, ‘আমাদের দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে তিনি প্রথম কোনো বিরোধী দলের প্রধান, যিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘করবিন সাহেবের সহকর্মীদের বলবো, (আগাম নির্বাচন বিষয়ে) নিজেদের অবস্থানের কার্যকারিতা আরো ভালোভাবে ভেবে দেখুন।’