কাশ্মীর সংকট নিয়ে ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ জাতিসংঘ
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-ক অনুচ্ছেদের বিলোপ এবং রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে অত্যন্ত চিন্তিত জাতিসংঘ।
কাশ্মীরে এ মুহূর্তে ভারত সরকার যে শর্তগুলো চাপিয়েছে, তাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকা অঞ্চলে সব ধরনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সেখানকার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের পর নতুন মাত্রা পেল কাশ্মীর ইস্যু।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার এক টুইটে বলা হয়, ‘কাশ্মীরে আইনি কড়াকড়ি চলছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।’
টুইটারে ভিডিও পোস্টে জাতিসংঘের মুখপাত্র জানান, নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে কাশ্মীর উপত্যকার উদ্বেগজনক মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘নতুন মাত্রায়’ পৌঁছেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় মোদি সরকার। এতেই উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এমন পদক্ষেপ কাশ্মীর উপত্যকার জনগণকে ‘জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় আলাপ-আলোচনায় অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেবে’ বলেও সতর্ক করেন জাতিসংঘের মুখপাত্র।
"We are deeply concerned that the latest restrictions in Indian-Administered Kashmir will exacerbate the human rights situation in the region" -- @UNHumanRights spokesperson
— United Nations (@UN) August 7, 2019
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছিল জাতিসংঘ। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে। তৈরি হয় ইউনাইটেড নেশনস কমিশন ফর ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান। সমাধানসূত্র খুঁজতে জাতিসংঘের এ কমিশনের সদস্যরা তিনবার উপমহাদেশে আসেন। তাঁরা প্রস্তাব দেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে প্রথমে পাকিস্তানকে সেনা সরাতে হবে। তারপর ভারতও সিংহভাগ সেনা সরিয়ে নেবে। দুই দেশই সেনা প্রত্যাহারের পর হবে গণভোট। কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ ভারতের সঙ্গে থাকতে চান নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে, তা জানা হবে গণভোটের মাধ্যমে। কিন্তু জাতিসংঘের দেখানো পথে হাঁটেনি ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান দাবি করে, তারা সেনা সরালেই যে ভারতও সেনা সরাবে তার নিশ্চয়তা কী? আর ভারত পাল্টা জবাবে বলে, আগে পাকিস্তান সেনা সরাক। ভারত সরকারের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর পাকিস্তানের দাবি, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবেই কাশ্মীরকে বিতর্কিত এলাকা বলা হয়েছে। তাই কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
এদিকে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদাদানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণায় করায় ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পাল্টা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকারের পদক্ষেপের কারণে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধ করাসহ মোট পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান।
সিদ্ধান্তগুলো হলো—
১. ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করা,
২. ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধ করা,
৩. দ্বিপক্ষীয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা,
৪. কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে যাবে পাকিস্তান,
৫. ১৪ আগস্ট বীর কাশ্মীরিদের প্রতি সহমর্মিতা জানানো এবং ১৫ আগস্ট পাকিস্তানে কালো দিন হিসেবে পালন করা হবে।