নদীর তীরে কাদামাখা শিশুর মরদেহ, স্তম্ভিত অন্তর্জালবাসী
ছবিটি দেখলে আবেগ দমিয়ে রাখতে পারবেন না কোনো সুস্থ মানুষই। নদীর তীরে পড়ে আছে একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু। দেখে মনে হবে, হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙার নয়। ছবিটি ভারতের বিহার প্রদেশের মুজাফ্ফরপুর জেলার। বাগমতী নদীর পাড়ে তিন বছরের অর্জুনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্তম্ভিত অন্তর্জালবাসী।
ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার সকালে মুজাফ্ফরপুর জেলার শীতলপট্টি এলাকার রানি দেবী নামের এক নারী তাঁর চার সন্তানকে নিয়ে বাগমতী নদীতে আসেন প্রাত্যহিক কাজ সারতে। কাপড় কাচা, গোসল করা ইত্যাদি ঘরের কাজ সারছিলেন রানি দেবী। হঠাৎ নদীর এক প্রবল ঢেউয়ে ভেসে যায় শিশু অর্জুন। অর্জুনকে বাঁচাতে তিন সন্তানসহ নদীতে ঝাঁপ দেন রানি। আশপাশের মানুষ রানিদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে রানি দেবী ও তাঁর এক মেয়ে রাধাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু রানির অন্য তিন সন্তান অর্জুন, রাজা ও জ্যোতি ভেসে যায় নদীতে। এরপর আজ বৃহস্পতিবার পাড়ে ভেসে আসে অর্জুনের মৃতদেহ।
গোটা বিহার এখন বন্যাকবলিত। এখন পর্যন্ত এ প্রদেশে বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ।
নদীর পাড়ে বিহারের অর্জুনের নিথর দেহ নেটিজেনবাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছে এমন আরো দুটি পুরোনো ছবির কথা।
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তের রিও গ্রান্ডে নদীতে ভেসে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী এক বাবা ও তাঁর শিশুকন্যার নিথর দেহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, বাবা ও ছোট্ট শিশুটির নিথর দেহ উপুড় হয়ে নদীর তীরে পানির মধ্যে পড়ে আছে। শিশুটির পরনে লাল রঙের প্যান্ট, পায়ে জুতা। শিশুটির একটি হাত তখনো বাবার কাঁধ জড়িয়ে ধরে রাখা। গোটা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ছবিটি।
এর আগে ২০১৫ সালে ভূমধ্যসাগরের তুরস্কের উপকূলে ভেসে আসে তিন বছর বয়সী সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মৃতদেহ। যুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ইউরোপের পথে পরিবারসহ যাচ্ছিল শিশুটি। পথে নৌকা ডুবে সলিলসমাধি ঘটে শিশুটির। এরপর সৈকতের বালুতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লান হয়ে ওঠে বিশ্বমিডিয়ার চাঞ্চল্যকর খবর। ইউরোপ শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে সিরিয়া সংকটে পড়া হাজারো মানুষকে।