গো-মূত্র দিয়ে হাসপাতাল জীবাণুমুক্তকরণ!
শুধু দুধের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ভারতের মুম্বাইয়ের কংগ্রেস করপোরেটর পারমিন্দর ভার্মা গরুর কাছে কৃতজ্ঞ নন। বরং গরুর মূত্র ব্যবহার করে নিজের বাড়িঘর জীবাণুমুক্ত করার কারণেও গরুর প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি।
আর এখন নিজের বাড়িতে ব্যবহারের পর ভারতের মুম্বাইয়ের হাসপাতালগুলোতেও যেন জীবাণুমুক্তকরণের কাজে গরুর মূত্রের ব্যবহার করা হয় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন পারমিন্দর ভার্মা। এ জন্য মুম্বাই পৌরসভাকে একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
পারমিন্দর ভার্মা এনডিটিভিকে বলেন, ‘জীবাণুমুক্ত করার কাজে দীর্ঘদিন ধরেই গোমূত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমি আমার বাড়িতে প্রতিদিনই এটি ব্যবহার করি। এটা জীবাণুদের ধ্বংস করে এবং সহজেই পাওয়া যায়। আমি বাড়ির কাছের গরুর খামার থেকে এটা সংগ্রহ করি। আমি নিশ্চিত যে গোমূত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোর পরিষ্কার করা সম্ভব।’
মালাদের এই করপোরেটর মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। প্রস্তাবে সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতাল গোমূত্র দিয়ে পরিষ্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
যা বলছে হাসপাতালগুলো
দিকে ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালের জন্য গোমূত্র কতটুকু উপযুক্ত হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলেননি। মুম্বাইয়ের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উল্লেখযোগ্য কেইএম হাসপাতালের ডিন ডা. অবিনাশ সুপ বলেন, ‘আমি এই প্রস্তাব সম্পর্কে জানি না। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে তাই আমার এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।’
প্রাচীনকাল থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাছে গোমূত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে তবে এটি হাসপাতাল পরিষ্কারের জন্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে সম্পকে এখনো নিশ্চিত না মুম্বাইয়ের চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞদের ‘না’
নাগপুর ভেটেরিনারি কলেজের গবেষক ডা. ভি এল দিওপুরকার হাসপাতাল পরিষ্কারক হিসেবে গোমূত্রের ব্যবহারকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গোমূত্রে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে তাতে এটা কোনোভাবেই হাসপাতাল পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ অশিক্ষিত। গোমূত্র কৃষিকাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে কখনোই নয়।’
এমনকি গরু নিয়ে কাজ করা ভারতের গো-বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্রও এই প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছে। সংস্থাটি প্রায় দুই দশক ধরে গরুর বিভিন্ন উপযোগিতা নিয়ে গবেষণা করে আসছে। তবে জীবাণুমুক্ত করার কাজে গোমূত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত কোনো তথ্য তারাও কখনো দেয়নি।
কেন্দের সমন্বয়ক সুনীল মনিসিংহ বলেন, ‘গোমূত্রে ফাঙ্গালবিরোধী, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে। পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি দেশে গোমূত্র দিয়ে তৈরি করা তিনশরও বেশি জিনিসের পেটেন্ট করা আছে আমাদের। কিন্তু আমরা এমন কোনো জিনিস তৈরি বা প্রচার করি না যা জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, বিভিন্ন ধরনের কৃষিকাজে এবং মানুষ ও পশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরির কাজেই গোমূত্র বেশি ব্যবহার করা উচিত।’