এ বছর রাবণ মরবে না!
এই দশমীতে মারা পড়বেন না দৈত্যরাজ রাবণ। রামলীলার মঞ্চে রাবণ মরবেন না বলে জানিয়েছেন ভারতের আগ্রায় ঐতিহ্যবাহী রামলীলায় গত ২০ বছর ধরে রাবণ সেজে অভিনয় করা মাটরু সিং। আর এই ঘোষণার কারণ, এ বছর আয়োজক কমিটি তাঁকে অসুন্দর বলেছে এবং তাঁর বদলে সুন্দর চেহারার অভিনেতা আনা হয়েছে রাবণ চরিত্রটির জন্য। ভারতের আগ্রায় ৪০০ বছর ধরে এই রামলীলার আয়োজন করা হচ্ছে।
আয়োজক কমিটি তাঁকে রাবন চরিত্র থেকে বাদ দেওয়ায় এই অপমানের জবাব দিতে মাটরু সিং ঘোষণা দিয়েছেন, রামলীলার মঞ্চে রাবণ এ বছর মরছেন না। তবে তা কীভাবে সম্ভব সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তিনি।
এই কথা শুনে রীতিমতো মাথায় হাত আয়োজক কমিটির। কারণ মাটরু সিং নিজেও দশমী শোভাযাত্রা ও শহরের সবচেয়ে পুরোনো রামলীলার আয়োজক সমিতির একজন নির্বাহী সদস্য। তাই তাঁর হুমকিতে চিন্তিত সমিতির অন্য সদস্যরা। কারণ এর পর থেকে সমিতির সংবাদ সম্মেলন ও অন্যান্য প্রস্তুতি সংক্রান্ত কাজে অনুপস্থিত থাকছেন তিনি। তাই দশমীর দিন কোনো রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে আয়োজক সমিতির পক্ষ থেকে।
সমস্যাটা শুরু হয় যখন আয়োজক কমিটি ইসকন বৃন্দাবনের সঙ্গে এ বছর যৌথভাবে রামলীলার আয়োজন করার পরিকল্পনা করল। যৌথ কমিটি সিদ্ধান্ত নিল যে, মথুরা ও বৃন্দাবনের সুন্দর চেহারার শিল্পীরা রামলীলায় অভিনয় করবেন। বিশেষ করে রাম, লক্ষণ, সীতা ও রাবনের চরিত্রে।
রামলীলা সমিতির নির্বাহী সভাপতি ভিপিন চৌধুরী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমরা মাটরু সিংয়ের মঞ্চের অভিনয়ে সন্তুষ্ট নই। ইসকন রামলীলায় অভিনয় করার জন্য সুন্দর চেহারার রাম, রাবন ও সীতার চরিত্র খুঁজে নিয়ে এসেছে। এতে আমাদের রামলীলা অন্য সবার চেয়ে সুন্দর ও ভালো হবে।’
কিন্তু হঠাৎ করে এই চরিত্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়েছেন গত দুই দশক ধরে রাবনের চরিত্রে অভিনয় করা মাটরু সিং। এতে অপমানিত বোধ করেছেন তিনি। মাটরু সিং বলছেন, ‘আমার চেহারা কেমন তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। রামলীলা কমিটি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এদের একপক্ষ সমাজবাদী দলের সঙ্গে আর অন্যটি বিজেপির সঙ্গে মিলেছে। যেহেতু আমি এই দুই পক্ষের কারো সমর্থিত দলই করতে চাইনি, সেহেতু তারা আমার জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।’
সমিতির কিছু সদস্য অবশ্য অভিযোগ করে বলছেন, মাটরু সিং প্রায় সময়ই মদ্যপ অবস্থায় থাকতেন এবং কখনো কখনো মঞ্চে উঠে সংলাপও ভুলে যেতেন তিনি। তবে এই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন মাটরু। তাঁর মতে, ‘মদ্যপ অবস্থাতেই রাবনের আসল চরিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। তা ছাড়া আমি কখনোই এত বেশি পান করি না যে সংলাপ ভুলে যাব।’
অভ্যন্তরীণ এই সমস্যা যদি সমাধান না করা হয়, তাহলে এই দশমীতে রাবণ মরবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাটরু সিং।
এ বিষয়ে মাটরু সিংয়ের সঙ্গে টাইমস অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ সব সময়ই রামলীলার একটি অংশ। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। ২০১৩ সালের রামলীলাতেও এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। যেখানে রাম আর রাবণের মঞ্চের সৈন্যরা সত্যি সত্যিই লড়তে শুরু করে দিয়েছিল। ফলে শুরু হয়েছিল বিশৃঙ্খলা।’
আয়োজক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য বিনয় আগরওয়াল বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা রামলীলায় দুটি আলাদা যুদ্ধদৃশ্য দেখানোর পরিকল্পনা করেছি। এতে একটি মঞ্চে রাম আর রাবণ যুদ্ধ করবেন আর অন্য মঞ্চে তাঁদের অনুগত সেনারা যুদ্ধ করবেন।’