যোগব্যায়াম করতে গিয়ে ধমনি ছিঁড়ে স্ট্রোক
সুস্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়ামের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সারাবিশ্ব। তবে যোগব্যায়াম করতে গিয়ে ধমনি ছিঁড়ে স্ট্রোক করেছেন ৪০ বছর বয়সী রেবেকা লে নামের একজন নারী। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে।
যোগব্যায়ামের হ্যান্ডস্টেন্ড আসন করতে গিয়ে কেবল স্ট্রোক নয়, স্মৃতি শক্তি হারানো ও তীব্র মাথাব্যথার মতো সমস্যায় ভুগেছেন তিনি। তবে এরপরও এই ধ্যান অনুশীলনে তাঁর একাগ্রতা কমেনি। ফক্স নিউজ, ডেইলি মেইল জানিয়েছে এই তথ্য।
রেবেকা লে বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে শরীরের জন্য ব্যায়াম ও ডায়েটের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম, তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যায়াম করে স্ট্রোক করিনি।’
২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে, লে সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ারদের জন্য তার ‘হলোওয়াক হ্যান্ডস্ট্যান্ড’ আসনটি রেকর্ড করছিলেন। তবে আসনটি করার পর তিনি হাতের নিয়ন্ত্রণ হারান এবং চোখে ঝাপসা দেখতে থাকেন।
এই অনুভূতি কেবল পাঁচ মিনিটের জন্য ছিল জানিয়ে লে বলেন, ‘তবে এরপর মাথায় আবার আঘাত শুরু হয়। আমি ছোট বেলায় মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগেছি। তবে এই মাথাব্যথাটি একটু অন্যরকম ছিল।’
দুদিন পর মিসেস লে খেয়াল করেন, তার চোখের পাতা বারবার বন্ধ হয়ে আসছে। আর চোখের মণির আকার ভিন্ন হয়ে গেছে। লে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম খুব বাজে কিছু ঘটছে।’
এই সময় তাঁর স্বামী কেভিন (৪৫) তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। এমআরআই করার পর দেখা যায় লে স্ট্রোক করেছেন।
‘চিকিৎসক ও কর্মীরা হাসপাতালের ছোট্ট কক্ষটিতে আসেন। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাঁরা খুব একঘেয়ে গলায় বলেন, “আচ্ছা, আমার প্রিয়, আপনি স্ট্রোক করেছেন ।“ বলেন লে।
‘আসলে সেই সময় কেভিন ও আমি একটু হাসছিলাম। ভাবছিলাম, চিকিৎসকরা হয়তো মজা করছেন। কারণ, আমার বয়সের এবং আমার স্বাস্থ্যে কেউ সাধারণত স্ট্রোক করে না। তবে এই সময় চিকিৎসকরা নিরব ছিলেন এবং তাদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল কথাটি সত্য।’
এরপর পাঁচদিন লে নিউরোলোজিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ছিলেন। চিকিৎসকরা ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না কীভাবে একজন কর্মক্ষম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অধূমপায়ী ৪০ বছরের ব্যক্তি স্ট্রোক করতে পারেন।
মিসেস লে বলেন, ‘তবে রক্ত চলাচল, আল্টাসাউন্ড, এম আর আই, সিটি স্ক্যান, সিটিএ স্ক্যান একই প্রতিবেদন দিচ্ছিল।’
যোগব্যায়ামের আসনটি করার সময় লে এর ডান দিকে ক্যারোটিড ধমনি ছিঁড়ে যায়। এই ধমনি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে হওয়া ট্রমা থেকে ছোটখাটো একটি অ্যানিউরিসম (শিরা স্ফীত হয়ে যাওয়ার সমস্যা) তৈরি হয়।
সিডার সিনাই মেডিকেল সেন্টারের মতে, গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে ঘাড়ে আঘাত, ঘাড়ের চরম ঘূর্ণন, কিছু শারীরিক কমকাণ্ড-যেমন, স্ক্যাটিং, সাঁতার, নাচ, যোগব্যায়াম, জন্মদানের সময়টি, এমনকি হাঁচি দেওয়ার সময় এই ক্যারোটিড ধমনী ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে ওষুধ দেওয়া হয় এবং অনেক সময় সার্জারি করতে হয়।
প্রথম দিকে মিসেস লে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে যোগব্যায়ামের মতো স্বাস্থ্যকর একটি বিষয় থেকে এটি ঘটতে পারে। ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এটা আমার সঙ্গে কীভাবে হলো। আমার শরীরের প্রতি রাগ হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল এটি আমার সঙ্গে প্রতারণা করছে’। - বলেন লে।
ছয় সপ্তাহ ধরে লে এর তীব্র মাথাব্যথা ছিল। সে আলো সহ্য করতে পারছিলেন না এবং কারো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, ‘এই স্ট্রোকের কারণে আমার ভয়াবহ মাথাব্যথা হচ্ছিল। এ রকম মাথাব্যথায় আমি আগে কখনো ভুগিনি। আমি কারো সাহায্য ছাড়া গোসল করতে পারছিলাম না, চুল ধুতে পারছিলাম না, এমনকি ওষুধগুলোও খেতে পারছিলাম না। প্রথম কয়েক মাস অন্ধকারের ভেতর থাকতাম।’
তবে ধীরে ধীরে লে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করেন এবং যোগব্যায়ামের মাদুরে ফিরে যান। শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে আলোকপাত করার জন্য তিনি লোটাস আসন করতে শুরু করেন।
লে জানান, সম্পূর্ণ নিরাময়ের পর, তিনি এখনো ভয় পান যেকোনো সময় স্ট্রোক হওয়ার। তাই তিনি এমন আসনগুলো করেন যেগুলো সহজ ও নিরাপদ মনে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমি ১০০ ভাগ ঠিক হতে পারব না। আসলে এখন আমার পায়ের আঙুল স্পর্শ করাটাই আমাকে সুখি করতে যথেষ্ট।‘
‘আর কোনো যোগীর যেন এই সমস্যায় পড়তে না হয়, এই ভাবনা থেকে আমি সবাইকে এই গল্পটি বলতে চাই’-বলেন তিনি।