সীমান্তে ১৪ হাজার বাঙ্কার নির্মাণ করছে ভারত
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষায় মাটি খুঁড়ে ১৪ হাজার নিরাপদ বাঙ্কার নির্মাণ শুরু করছে ভারত। বোমা হামলা হলে ওই এলাকার বাসিন্দারা ওইসব বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে পারে।
ইটপাথর আর লোহার সমন্বয়ে নির্মিত এই বিপুল বাঙ্কার বানাতে ৫০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সরকারি প্রকৌশলীরা। স্থানীয় ঘরবাড়ির চেয়ে তিনগুন পুরু দেওয়াল ও ছাদ দিয়ে মাটির নিচের বাঙ্কারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশের ১২ থেকে ১৫টি এলাকায় ভারি বোমা বর্ষণ করে পাকিস্তান। ভারতীয় বাহিনীর এক মুখপাত্র এমন দাবি করেন। ভারতও পাল্টা বোমা নিক্ষেপ করে বলে জানান তিনি।
এমন অবস্থায় ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান পুঞ্চ জেলার জেলা প্রশাসক রাহুল যাদব। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে নতুন করে এসব শেল্টার নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়। সীমান্তে বাঙ্কার নির্মাণের এই প্রকল্পটি গত বছরের জুনে শুরু হয়। উভয় পক্ষ যখন বোমা বর্ষণ শুরু করে তাতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ছেড়ে ছোটাছুটি করতে হয় বিধায় এমন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারত সরকার।’
সীমান্তের ভারতপক্ষের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে পালাতে ক্লান্ত। এখানকার গরিব কৃষক পরিবারগুলো তাদের গবাদিপশু ও ফসল ফেলে এলাকা ছেড়ে যে কতটা ক্ষতির মুখে পড়েন তা অবর্ণনীয়।
চাচওয়াল গ্রামের ৭৫ বছর বয়সি বাসিন্দা তানাত্তার সিং বলেন, ‘২০০২ সালে বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়। ভারতীয় বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের নিকটে গমক্ষেতে ঘেরা বাড়ি তানাত্তার সিংয়ের।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যেকোনো সময় গোলাগুলি হতে পারে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সীমান্ত এলাকায় থাকতে হয়।’
তানাত্তার সিংসহ গ্রামের অন্য বয়োজ্যেষ্ঠরা মাটি খোঁড়া দেখছিলেন। তাদের গ্রামের চারশো পরিবারের জন্য একটি বাঙ্কার নির্মাণে মাটি খোঁড়া হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদকর্মী ডজনখানেক নবনির্মিত বাঙ্কার পরিদর্শন করেন। এগুলোর কিছু কিছু পানির নিচে, কিছু আবাদি জমির মধ্যে আবার কিছু আছে বাড়িঘরের আশপাশে।
তবে ‘এই বাঙ্কার সাধারণ বোমা হামলা থেকে রক্ষা করতে’ পারবে বলে বাঙ্কার নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী রয়টার্সকে বলেছেন।
অন্যদিকে সীমান্তের পাকিস্তানপক্ষের বাড়িঘরগুলোর অবস্থা নাজুক। ২০০৩ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর নির্মিত বসতি এলাকার সব বাড়িতে বাঙ্কার সুবিধা নেই। গত কয়েকদিনে ভারতীয় বাহিনীর বোমা হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে এবং অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কয়েক মাস ধরে বিতর্কিত নিয়ন্ত্রণরেখার সীমান্ত ছাড়াও পাকভারত সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গুলি ও বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটে আসছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় আধাসামরিক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে।