জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ফুঁসে উঠেছে ভারত, পাকিস্তানকে দায়ী

Looks like you've blocked notifications!

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে সিআরপিএফের বাসে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মৃত জওয়ানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৪০ জওয়ান। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জওয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, কাশ্মীরের এই জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালেই বৈঠকে বসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কমিটি।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন প্রমুখ।

পাশাপাশি আজই শ্রীনগরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি এক বার্তায় বলেন, জঙ্গি হামলা চালিয়ে যারা উপত্যকার শান্তি নষ্ট করতে চাইছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। এ হামলায় পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে, এই নারকীয় জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গর্জে উঠেছে গোটা ভারত। আর কোনো সমঝোতা নয়, আর ঠাণ্ডা ঘরে বসে আলোচনা নয়। অনেক হয়েছে, এবার বদলা চাই। পুলওয়ামার ঘটনায় এভাবেই গর্জে উঠেছে দেশ। রাগে ফুঁসছে দেশবাসী। ‘আর সন্ত্রাসবাদকে বরদাশত নয়’ এ স্লোগানেই সরব হয়েছে ভারত।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের একাধিক রাজ্যে শহীদ জওয়ানদের উদ্দেশে মোমবাতি মিছিল করে ভারতের হাজার হাজার মানুষ। এমনকি কাশ্মীরের বাসিন্দারাও গর্জে উঠেছেন। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তাঁরাও।

জুয়েল চক, পুরানি মান্ডি, জনিপুর, গান্ধীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মোমবাতি মিছিল করে ক্ষুব্ধ জনতা। ভোপালেও বের হয় প্রতিবাদ মিছিল। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশেও সন্ত্রাসবিরোধী স্লোগান মুখর হয় লাখো মানুষ। মোমবাতি হাতে পথে নামে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও। এ ঘটনায় পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেরও দাবি উঠতে শুরু করেছে।

গতকাল পুলওয়ামার ঘটনার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। রাজ্যের মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জম্মু হাইকোর্টের পাশাপাশি উপত্যকার অন্যান্য আদালতের কাজকর্মও বন্ধ রাখা হয়েছে। কাশ্মীরে আজ বনধ ডেকেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টায় জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপোরার বাইপাসের কাছে গোরীপোরা এলাকায় জম্মু-শ্রীনগর ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর এই হামলা চালানো হয়।

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০টি গাড়িতে কমপক্ষে আড়াই হাজার সিআরপিএফ জওয়ানের বহর গতকাল টহলে দিচ্ছিল। সাধারণত সেনাবাহিনীর বহর যাত্রার সময় রাস্তায় সাধারণ গাড়ি চলাচল থামিয়ে দেওয়া হয়। তবে পুলিশ বা সিআরপিএফের বহর যাত্রার সময় সেই নিষেধাজ্ঞা থাকে না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোরীপোরার কাছে আদিল আহমেদ দার নামে জইশ-ই-মুহাম্মদের এক আত্মঘাতী হামলাকারী প্রায় ২০০ কেজি বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি নিয়ে বহরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঢুকেই সে বহরের একটি গাড়িতে ধাক্কা মারে। ফলে ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটে। যে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় বিস্ফোরণ ঘটে, সেটিতে ৫০ জনেরও বেশি জওয়ান ছিলেন বলে জানা যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আট ভারতীয় সিআরপিএফ জওয়ানের। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বাকিদের। বিস্ফোরণের পাশাপাশি এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।