‘কলকাতা ও বঙ্গবন্ধু’ নামে বই লিখবেন লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

Looks like you've blocked notifications!
কলকাতায় আন্তর্জাতিক বইমেলা উপলক্ষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা প্রাঙ্গণে এসবিআই মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলা সাহিত্য ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি : এনটিভি

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামী দিনে ‘কলকাতা ও বঙ্গবন্ধু’ নামে একটি বই লেখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।

কলকাতায় চলমান ৪৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা উপলক্ষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কলকাতাসংলগ্ন সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা প্রাঙ্গণে এসবিআই মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলা সাহিত্য ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক  আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।

সভার শুরুতেই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের ধমনিতে যে রক্তস্রোত প্রবাহিত হয়, সেই রক্তের স্রোতে যে গর্জন, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু আমাদের ধমনির রক্তে গর্জন তৈরি করে দিয়েছেন। নেতাজি বলতে যেমন সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামীজি বলতে যেমন বিবেকানন্দকে বোঝায়, তেমনি বঙ্গবন্ধু বলতে শেখ মুজিবুর রহমানকে বোঝায়।’

দুই বাংলায় অনেক বন্ধু ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কেউই আমাদের বন্ধু নয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্পূর্ণ পুরুষ। তাঁর মধ্যে কোনো দুর্বলতা বা ন্যাকামো ছিলো না। তাঁর কণ্ঠস্বরে একটা মেঘের গর্জন ছিলো। প্রকৃত পুরুষ বলতে ঠিক যা বোঝায়, তাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এমন পুরুষই নেতা হতে পারেন। এর পরপরই আগামীতে তাঁকে নিয়ে একটি বই লেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।

সভায় উপস্থিত বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘একটি ভাষাকে কেন্দ্র করে কোনো রাষ্ট্রের জন্ম হতে পারে বা একটি ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিতে পারে তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতা লাভের জন্য আমরা যেমন রক্ত দিয়েছি, তেমনি ভারতের সেনাসদস্যরাও রক্ত দিয়েছেন। তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের দুই বাংলার ভাষা-সংস্কৃতি এক। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি, কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশি আর আপনারা ভারতীয়। এ কারণেই দুই বাংলার মধ্যে সীমানা।’

দুই বাংলার সাংস্কৃতিক প্রতিবেশ একই রকম, তবুও এ দুইয়ের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুত চক্রবর্তী বলেন, ‘দুই বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ভাষা এক। আমাদের মধ্যে যে কাঁটাতারের বিভাজন, তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। কারণ, বাংলাদেশের ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর যেখানেই যাই না কেন, আমি বাংলায় কথা বলতে পারি। আমি মাছ-ভাত খেতে ভালোবাসি, তারাও ভালোবাসে। আমি রবীন্দ্রসংগীত ভালোবাসি, তারাও ভালোবাসে। নজরুল আমার প্রাণের কবি, তাদেরও প্রাণের কবি। রেজওয়ানা আমার প্রিয় শিল্পী, তাদের কাছেও তাই। কিন্তু তারপরও কেন এই বিভাজন?’

আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এমপি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই শিল্পী, গায়ক, কবি, সাহিত্যিক সকলে এক মিছিলে সমবেত হয়েছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণের পর সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সকলের কণ্ঠে ছিল একই কথা, ‘আমরা সবাই বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’।”

আলোচনা সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে গত শনিবার বইমেলা প্রাঙ্গণে উদযাপিত হয় বাংলাদেশ দিবস।

আলোচনা সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, কলকাতা বুক সেলার্স অ্যান্ড গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।