লেকের পানিতে আগুন জ্বলে!
ছবিতে আপনারা যা দেখছেন তা কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর। শুভ্র সাদা ফেনা। কিন্তু যখন আপনি জানবেন, হ্রদের (লেক) পানিতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ থেকে দিনে দিনে তৈরি হয়েছে এই ফেনা, তখন আর তা সুন্দর লাগবে না আপনার কাছে। বাস্তবে সেটিই হয়েছে।
ছবিটি ভারতের একটি লেকের। এর ওপরে সাদা যে আস্তরণটা দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো অ্যামোনিয়া ও ফসফেট মেশানো পানির ওপরের ফেনা। এই পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। আর বলাই বাহুল্য যে এই ফেনা খুবই বিষাক্ত। এটা এতটাই বিষাক্ত যে তেল, গ্রিজ ও ডিটারজেন্ট মেশানো এই পানিতে প্রায়ই আগুন ধরে যায়।
যে লেকটির কথা বলা হচ্ছে, সেটির অবস্থান ভারতের বেঙ্গালুরুতে। প্রায় ৩৬ কিলোমিটার চওড়া এই লেকের নাম বেলান্দুর লেক। ফেনায়িত এই লেকের পানি আবার একটি খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় লেকটির এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আর যখন বৃষ্টি হয় তখন এই লেকের ময়লা পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা ও রাস্তায়। পুরো বিষয়টি দেখতে যেমন খারাপ, এর গন্ধটাও তেমনি বাজে।
আইএফএল সায়েন্স ডট কমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এই ফেনায় মাঝে মাঝেই আগুন ধরে যায়। তবে কীভাবে এই্ আগুনের সূত্রপাত হয় তা অবশ্য জানা যায়নি। পানির উপরিভাগে মিথেন গ্যাসের ক্রিয়ায় এই আগুন জ্বলে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত লেকের পানিতে কেউ জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলেছিলেন। আর তা থেকেই শুরু হয় এই বিপত্তির।
এদিকে বাতাসে এই ফেনা আশপাশের শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। এতেও পরিবেশদূষণ ঘটছে। এর ফলে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটুকু বলা যায় যে, পানি, রাসায়নিক পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ইত্যাদি মিশে যা তৈরি হচ্ছে তা শরীরের জন্য কখনোই ভালো হবে না।
এর আগে ২০০০ সালে এই লেকে বর্জ্য ফেলা নিয়ে একটি রিট করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত জুন মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অবৈধ স্থাপনা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে আবর্জনা ফেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে লেকটির এমন দুর্দশা হয়েছে।
১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর একটি নদীতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে গড়ে ওঠে পরিবেশ আন্দোলন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারতেও এমন জোরদার আন্দোলন গড়ে ওঠার সময় হয়েছে।