ভারতে ভূতমেলা!
ভূত, প্রেত, ডাইনির ভয়ে অতিষ্ঠ? কীভাবে তাদের জব্দ করে পরিত্রাণ পাবেন তা নিয়ে ভাবছেন? তবে এবার বোধহয় আপনার এসব চিন্তা থেকে অবসর নেওয়ার সময় এসেছে। আপনার জন্যই তবে বসেছে ভূতমেলা। একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে সোজা চলে যান ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের এ মেলায়।
ঝাড়খন্ডের পলামু জেলার নওডিহি থানার অন্তর্গত ঝড়িয়া নদীর ধারে সরাইওডিহি গ্রামে শুরু হয়েছে এই অভিনব ভূতমেলা। অশরীরীদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতেই নাকি আয়োজন করা হয়েছে এ ভূতমেলার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরাইডিহি গ্রামে এবারই প্রথম বড় পরিসরের এই মেলা বসে। তবে ভূতমেলার সঙ্গে অপরিচিত নন এলাকার মানুষজন। প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে দশেরার পর পলামুর হায়দারনগরে এই মেলা বসত। তবে তা কলেবরে এত বড় ছিল না।
গত কয়েক বছরে স্থানীয় হায়দারনগরের ভূতমেলার সাফল্য ও ভিড় দেখে এ বছর স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে সরাইডিহি গ্রামে বড় পরিসরের এ ভূতমেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এই ভূতমেলায় দৈনিক প্রায় দশ থেকে বারো হাজার মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন।
মেলাতে ভূত, প্রেত, ডাইনি, দৈত্য-দানোদের শায়েস্তা করার জন্য উপস্থিত কয়েকশ ওঝা, গুণীন, তান্ত্রিক। এমনকি তাঁরা অশরীরীদের শায়েস্তা করার জন্য বিক্রেতারা রীতিমতো তাবিজ, কবচ, পানি পড়া, তাগাসহ নানা টোটকা নিয়ে মেলায় দোকানও খুলে বসেছেন। এখন শুধু খদ্দেরের অপেক্ষা।
শুধু ওঝা কিংবা গুণিন নয়, এই মেলায় একটু আধুনিক চিন্তাভাবনা নিয়ে অশরীরী দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বেশ কিছু হাতুড়ে চিকিৎসকও। দুর্গাপূজার আগে এখন এই মেলা ঘিরে সরাইডিহি রীতিমতো জমজমাট।
এই মেলায় এলে দেখতে পাবেন উদ্ভট সব দৃশ্যও। এখানে খোলা আকাশের নিচে কেউ হো হো করে অকারণ হাসছেন, কেউ বা আবার ডানে-বাঁয়ে ঝড়ের গতিতে মাথা দোলাচ্ছে। কেউ মাথা ঠুকছে মাটিতে, কেউ আবার নিজের মাথার লম্বা লম্বা চুল কেটে তা সামনে রাখা আগুনের কুণ্ডলিতে ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে। আবার কেউ মানুষের খুলি নিয়ে পূজায় বসেছে। অনেককে দেখতে পাবেন ভূতের সঙ্গে বিড় বিড় করে কথা বলতে, অনেকে তো আবার ভূতের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে, তাদের রীতিমতো শাসাচ্ছে। পাশাপাশি অশরীরীদের খপ্পড়ে পড়া মানুষদের ঘাড় থেকে ভুত ঝাড়ানোর জন্য নানা অমানবিক দৃশ্যও চোখে পড়বে আপনার।
শুধু স্থানীয় লোকজনই নন, মানুষ আসছেন দূর-দূরান্ত থেকেও। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও ভূতকে শাসন করার অভিপ্রায়ে বহু ধরনের মানুষের আনাগোনাও শুরু হয়েছে এই মেলায়। কেউ আসছেন ভূত ঝাড়াতে, আবার কেউ আসছেন বাড়িতে ভূতের উপদ্রব বন্ধ করতে, কেউ আসছেন বশীকরণ দ্রব্য কিনতে, কেউ আসছেন গ্রামে ডাইনি বলে কেউ আছে কি না তা জানতে। পাশাপাশি হরেক প্রজাতির ভৌতিক, আধা ভৌতিক সমস্যায় তাবিজ, কবজ, তাগা, পানিপড়া, ধুলোপড়া কেনা ও সংগ্রহ করার বিষয় তো রয়েছেই।
তবে এ মেলার খবর জানার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝাড়খন্ডের পলামুর জেলার জেলাশাসক কে শ্রীনিবাসন জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি স্থানীয় মুখিয়া এবং কয়েকজনের উদ্যোগে এই মেলা শুরু হয়েছে। তবে ঘটনা জানার পরেই অবিলম্বে মেলা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু জেলা শাসকের নির্দেশের পরেও রমরমিয়ে এই মেলা বসায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই মেলা বন্ধ করতে গিয়ে রীতিমতো আক্রমণের মুখেও পড়ে পুলিশ।
উন্মুক্ত মাঠে ভূতে ধরা ডাইনি, দৈত্য-দানোরা সমবেতভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশের ঢাল-তলোয়ার-বন্দুক। শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে গুলিও চালাতে হয় পুলিশকে।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের গুলিতে স্থানীয় রফিক আহমেদ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। ফলে মেলা নাকি আরও জোটবদ্ধ হয়েছে!
এদিকে স্থানীয় এডিজি (অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল) এই মেলা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন। এ মেলাকে ঘিরে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘঠিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে এ ধরনের কার্যকলাপের অভিযোগে রমেশ ভূঁইয়া নামে এক ওঝাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান এডিজি কর্মকর্তা।
তবে অন্ধবিশ্বাসে উন্মত্ত ব্যক্তিরা এই ভূতের মেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আপাতত অনড় রয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।