ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গাইডো নিজেকে দেশটির ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণাকে সমর্থন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ।

এই সমর্থনের জের ধরে সম্প্রতি বিরোধীদের অংশগ্রহণহীন ভোটে নির্বাচিত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তাঁর দেশ থেকে কূটনীতিকদের চলে যেতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। বিরোধীদের পাল্টা শোভাযাত্রা বের করে মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাঁর দলের নেতাকর্মীরা। মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে কিউবা, বলিভিয়াসহ কয়েকটি দেশ। দেশটির সেনাবাহিনী মাদুরোর পক্ষে রয়েছে। মাদুরো রাশিয়ারও মিত্র।  

এদিকে প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে দেশটির লাখো মানুষ। গতকাল বুধবার রাতভর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত দুদিনে মোট ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে কারাকাসভিত্তিক ডানপন্থী সংগঠন ভেনেজুয়েলান অবজারভেটরি অব সোশ্যাল কনফ্লিক্ট দাবি করেছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী কারাকাসসহ সব প্রধান শহরে।

এদিকে মাদুরোর সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা গ্রহণ করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভেনেজুয়েলা থেকে নিজেদের কূটনীতিককে ফিরিয়ে নেবেন না তাঁরা। একই সঙ্গে মাদুরোর শাসনামলকে তাঁরা আর আমলে নিচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী কারাকাসের পার্শ্ববর্তী খনিজসমৃদ্ধ এলাকা আলতামিরায় কতিপয় যুবক রাস্তা অবরোধ করলে অস্থিরতা শুরু হয়। সেনাসদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। গত দুদিনে কারাকাস ছাড়াও তাচিরা, বারিনাস, পর্তুগুয়েসা, আমাজনাস ও বলিভার রাজ্যের নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে কারাকাস ও বলিভারে সহিংসতার তীব্রতা শুরু হয় এবং ভেনেজুয়েলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বলিভারের সান ফেলিক্সে বিক্ষোভকারীরা ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডন্ট হুগো শাভেজের একটি মূর্তিতে অগ্নিসংযোগ করে।

সোমবার কারাকাসের একটি কমান্ড পোস্টে মাদুরোবিরাধীদের সঙ্গে ২৭ সৈন্যের এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে ‘সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানায়’।

ভেনেজুয়েলার নেতা হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর নিকোলা মাদুরো উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরই বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়তে থাকে। লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়।