ওবামা-হিলারির সম্পর্কে ফাটল
ডেমোক্রেটিক পার্টির শক্তিতে এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হিলারি ক্লিনটন। ওবামা সরকারের আগের আমলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনৈতিক জীবনে নানা সংকট উৎরাতে হয়েছে তাঁকে। তবে এবার বুঝি একটু বেশিই দলীয় নীতির সীমা লঙ্ঘন করলেন তিনি। বহুল আলোচিত ‘ওবামাকেয়ার’-এর আংশিক নীতির বাতিল চেয়ে বসেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি। ফলে এই মতবিরোধের জেরে ওবামা-হিলারির সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি বড় সমর্থন জোগায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক গোষ্ঠী। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা কথিত ‘ক্যাডিল্যাক ট্যাক্স’ বা ‘বিলাসী কর’ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে। এই কর আরোপ করা হলে শ্রমিকদের ওপর কর-চাপ বাড়বে বলে মনে করছে তারা।
সবার জন্য কম খরচে স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করতে ‘ওবামাকেয়ার’-এর বিকল্প নেই বলে মনে করে ওবামা প্রশাসন। তাঁদের মতে, স্বাস্থ্যবিমা যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যবিমা কোনো সুবিধা নয়, এটা মানুষের অধিকার। ওবামার স্বাস্থ্য পরিচর্যা নীতির বাস্তবায়ন হলে মার্কিনিদের বিমার আবেদনে কোম্পানি আর না বলতে পারবে না অথবা বেশি দামও ধরতে পারবে না।
স্বাস্থ্যবিমার জন্য ‘ক্যাডিল্যাক ট্যাক্স’ নীতি কার্যকর হবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এর পর থেকে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০ হাজার ২০০ ডলার এবং পরিবারের ক্ষেত্রে ২৭ হাজার ৫০০ ডলারের ওপর হলে ৪০ শতাংশ ক্যাডিল্যাক ট্যাক্স দিতে হবে। এভাবে স্বাস্থ্যবিমা খাত থেকে অতিরিক্ত ৮৭ বিলিয়ন ডলার বাড়তি কর আদায় করতে চায় ওবামা প্রশাসন। এই ধরনের কর কোম্পানিকে বহন করতে হবে, তবে কোনো ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু বহুদিন ধরে এই ধরনের কর আরোপের বিরোধিতা করে আসছে মার্কিন শ্রমিক গোষ্ঠীগুলো। আর এতে কোম্পানিগুলো তাদের শ্রমিকদের দেওয়া বিভিন্ন সুবিধার ক্ষেত্রে সীমানা টানতে পারে বা কিছু কিছু সুবিধা বাতিলও করতে পারে। এই কর অবশেষে পরোক্ষভাবে শ্রমিক বা কর্মীকেই বহন করতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধি শেলের মুর ক্যাপিতো এর আগে এক ভাষণে বলেছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা আইনের কারণে এরই মধ্যে মার্কিনিদের খরচ বাড়ছে, চাকরিতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিমা পরিকল্পনা বা পছন্দের চিকিৎসক পেতে অসুবিধা পেতে হচ্ছে।
হিলারির প্রতিপক্ষ, ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারনি সান্দারস ও মার্টিন ও’ম্যালি এরই মধ্যে ক্যাডিল্যাক ট্যাক্স বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে শ্রমিকদের ভোট পেতে হিলারিও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে হিলারি বলেন, ‘আমি কংগ্রেসকে কথিত ক্যাডিল্যাক্স ট্যাক্স বাতিলে উৎসাহিত করব।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে হিলারি ওবামার নৈকট্য থেকে দূরে সরে গেলেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওবামা প্রশাসনের আগের আমলের অর্থনীতিবিদ জেরার্ড বার্নস্টেইন স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘অনেক যুগ পর আমরা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে একটা চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারছি। এটি হবে একটি কার্যকর ব্যবস্থা। এটাকে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে।’
ক্যাডিল্যাক ট্যাক্স বাতিল যারা চায় তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বার্নস্টেইন বলেন, এই ট্যাক্স যারা বাতিল চায়, তাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে যে কেন তারা এমন চাইছে। বলতে হবে এর বিকল্প কী?’
হিলারি, সান্দারস ও ও’ম্যালির বক্তব্য প্রসঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘একধরনের রাজনৈতিক সস্তা নীতি গ্রহণ করেছে তারা। এতে রাজনৈতিকভাবে শ্রমিক গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।’
হিলারির এ অবস্থানের পর হোয়াইট হাউসের সমর্থন পাওয়ার দৌড়ে জো বাইডেন লাফ দিয়ে এগিয়ে গেলেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগোতে মার্কিনিদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে হবে হিলারিকে।