খোদ রাজপরিবারে বাধার মুখে সৌদি যুবরাজ!
সাংবাদিক জামাল খাসোগি খুনের ঘটনায় চাপের মুখে আছে সৌদি রাজপরিবার। এ কারণে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর বিরক্ত খোদ রাজপরিবারের সদস্যরা।
মোহাম্মদ বিন সালমান যাতে পরবর্তী বাদশাহ হতে না পারেন, সে জন্য তৎপর হয়ে উঠছেন রাজপরিবারেরই প্রভাবশালী একাধিক সদস্য।
সৌদি রাজকীয় আদালতের উচ্চপদে আসীন তিনজন ব্যক্তির সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে।
রয়টার্সের সূত্র বলছে, মোহাম্মদ বিন সালমানের কয়েক ডজন যুবরাজ চাচাতো ভাই রয়েছেন, যাঁরা কি না তাঁকে পরবর্তী বাদশাহ হিসেবে দেখতে চান না। তবে তাঁরা হয়তো ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নামবেন না। কারণ তাঁরা জানেন, বর্তমান বাদশাহ সালমান কখনোই তাঁর প্রিয় সন্তান মোহাম্মদের বিরুদ্ধে যাবেন না।
সূত্রমতে, তাঁরা পরিবারের অন্যদের সঙ্গে এ নিয়ে গোপনে আলাপ-আলোচনা করছেন। তাঁরা চান, বর্তমান বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই ও মোহাম্মদের চাচা আহমদ বিন আবদুল আজিজ (৭৬) যেন বাদশাহর দায়িত্ব নেন।
তিনটি সূত্রের একজন জানান, বাদশাহ সালমানের একমাত্র আপন ভাই আহমদ রাজপরিবারের সদস্যদের ছাড়াও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও পশ্চিমা ক্ষমতাধর কয়েকটি রাষ্ট্রের সমর্থন পাবেন।
গত অক্টোবরে প্রায় দুই মাসের বিদেশ সফর শেষে আহমদ বিন আবদুল আজিজ রিয়াদে যান। সফরের একপর্যায়ে লন্ডনে থাকাকালে সৌদি রাজতন্ত্রের পতন চেয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হলে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বর্তমান সৌদি নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। সৌদি বাদশাহ নির্ধারণে রাজকীয় সর্বোচ্চ ফোরাম ‘আনুগত্য পরিষদে’র জ্যেষ্ঠ তিন সদস্যের একমাত্র সদস্য তিনি, যিনি গত বছর মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের আপন ছোট ভাই আহমদ বিন আবদুল আজিজ (ডানে)। ফাইল ছবি : রয়টার্স
সৌদি রাজপরিবারে শতাধিক যুবরাজ রয়েছেন। ইউরোপের রাজপরিবারগুলোর মতো এখানে রাজা বা রানির বয়স্ক সন্তানই পরবর্তী মুকুটধারী হবেন এমন নিয়ম সৌদি রাজপরিবারে নেই। পরিবারের শাখাগুলোর মধ্যে জ্যেষ্ঠদের নিয়ে একটি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রয়টার্স অবশ্য এ ব্যাপারে আহমদ বিন আবদুল আজিজ বা তাঁর প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে বক্তব্য নিতে পারেনি। রিয়াদের কর্মকর্তারা এ মুহূর্তে বাদশাহ নিয়োগের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সম্প্রতি আকারে ইঙ্গিতে জানিয়েছেন, ৪০ বছর ধরে ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা অভিজ্ঞ ও ধীরস্থির প্রকৃতির আহমদ বিন আবদুল আজিজকে পরবর্তী বাদশাহ হিসেবে তাঁরা সমর্থন দেবেন। তবে এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। খাসোগি হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সিআইএ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো মোহাম্মদের পাশে রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার সিআইএর রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছেন ট্রাম্প।
আনুগত্য পরিষদ
বাদশাহর মৃত্যু হলে বা শাসনকার্য পরিচালনায় অক্ষম হলেই আপনাআপনি বাদশাহ হতে পারবে না না পশ্চিমাদের কাছে এমবিএস হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান। রয়টার্সের তিন সূত্রের একজন জানিয়েছেন, ৩৪ সদস্যের আনুগত্য পরিষদের অনুমোদনের পর বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে তাঁকে।
২০১৭ সালের বৈঠকে বাদশাহ সালমান তাঁর ছেলেকে ক্ষমতায় বসানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে আনুগত্য পরিষদ তাতে সমর্থন জানায়। এর মানে এই নয় যে, মোহাম্মদের বাবার মৃত্যুর পর তিনি সরাসরি বাদশাহ হয়ে যাবেন।
সৌদি উচ্চপদস্থরা রয়টার্সকে বলেছেন, সৌদি রাজপরিবারের প্রায় শতবর্ষের ঐতিহ্যগত জায়গায় হাত দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজপরিবারের ধর্মীয়, গোষ্ঠীগত ও বাণিজ্যিক খাতে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। এতে রাজপরিবারের অনেক সদস্য তাঁর ওপর বিরক্ত। অন্যদিকে খাসোগি হত্যা নিয়ে সারা দুনিয়ার সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি তাঁর অন্য সব এজেন্ডায় অনড়।