রক্তে ভেসে গেল ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর। রেললাইনের ওপর এবং পাশে দাঁড়িয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের  দশেরা উৎসবে রাবণ পোড়ানো দেখছিল শত শত মানুষ। আর সেই সময় ভিড়ের ওপর দিয়েই দ্রত গতিতে চলে গেল ট্রেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরের চৌরি বাজার এলাকায়। প্রাথমিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানা যায় ৫০ জন। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ জনে। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। আহতদের মধ্যে প্রচুর মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যপুরি হয়ে ওঠে অমৃতসরের চৌরা বাজারের যোধা ফটক এলাকা। জানা যায়,  দশেরা উপলক্ষে ওই দিন সন্ধ্যায় রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রাবণ বধ দেখছিল প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষ। যার মধ্যে ছিল নারী ও শিশুও। রাবণ বধের সময় প্রতীকী রাবণের গায়ে লাগানো বাজিগুলি ফাটতে শুরু করে। সেই সময় কিছু রকেট বাজিও ছুটে আসে ভিড়ের মধ্যে। ফলে ভয়ে অনেকেই পাশের রেল লাইনের ওপর চলে যায়। ঠিক সেই সময়ই দুদিকের আপ ও ডাউন রেললাইন ধরে ছুটে আসে দ্রুতগতির দুটি ট্রেন। একটি পাঠানকোট থেকে অন্যটি ছিল হাওড়া মেল। ট্রেনের চালক হর্ন বাজালেও বাজি আর বাজনার শব্দে অনেকেই তা শুনতে পায়নি। ভিড়ের মধ্যে বহু মানুষ রাবণ বধের ছবি ও ভিডিও নিজেদের মোবাইলে তুলতেই ব্যস্ত ছিল। ট্রেন আসার দিকে কারোরই খেয়াল ছিল না। তার ওপর দুদিকের লাইন থেকেই একসঙ্গে দুটি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলে আসায় কোনো দিকেই সরতে পারেনি দর্শকরা। ফলে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু হয় অসংখ্য মানুষের। ট্রেনের চাকার তলায় পিষে যায় একের পর এক মানুষ।

এই ঘটনায় ভারতের উত্তর রেলের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে পাঞ্জাবের অমৃতসর এবং মানেওয়ালার মাঝে ২৭ নম্বর রেল গেটের সামনে। একটি দ্রুত গতির ট্রেন চলে যায় ভিড়ের উপর দিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ট্রেনটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, অনেকের দেহ রেললাইন থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে ট্রেনের ধাক্কায়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে অমৃতসর সিভিল হাসপাতাল এবং গুরু নানক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। দুর্ঘটনার পরই স্থানীয়রা টর্চ ও মোবাইলের আলো জ্বেলে শুরু করে উদ্ধার কাজ। পরে উদ্ধারকারী টিম এসে উদ্ধারের কাজে হাত লাগায়। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পাঞ্জাব পুলিশ এবং ইন্দো-তিব্বতীয় বর্ডার পুলিশ ফোর্স। 

এই ঘটনায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।’ এরইমধ্যে মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন তিনি। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। 

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার এস এস শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ জন। এই দুর্ঘটনায় শনিবার পাঞ্জাব রাজ্যজুড়ে শোকপ্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পাঞ্জাব সরকার। বন্ধ থাকবে সব অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়েই যুক্তরাষ্ট্রে যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করে দ্রুত দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।