চোরেরও সাধ হয় সোনার টিফিন বক্সে খাওয়ার!

Looks like you've blocked notifications!
ভারতের হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির সংগ্রহশালা থেকে নিজাম রাজবংশের ব্যবহৃত এই সোনার টিফিন বাক্সটি চুরি গিয়েছিল। ছবি : সংগৃহীত

রাজা-রাজড়াদের ব্যাপারই তো আলাদা। তাঁরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাতেন। সোনাদানা, হীরা, জহরতে মোড়ানো তাঁদের জীবন। সুতরাং তাঁরা সোনার থালায় ভাত খাবেন, এ আর এমন কী। সোনা দিয়ে বানানো টিফিন বক্সে তাঁদের খাবার আসবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু তাই বলে রাজা-রাজড়াদের কায়কারবার যদি চোরের ভাগ্যে ঘটে, সেটা কি খুব স্বাভাবিক? চোর তো আর সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেনি যে তাকেও সোনার বাটিতে দুধ খেতে হবে বা সোনার টিফিন বক্সের বাটিতে ভাত খেতে হবে।

না হোক। সাধ বলে তো একটা কথা আছে। চোরেরও তো সাধ হতে পারে রাজা-রাজড়াদের মতো হওয়ার। আর হয়েছেও তাই। হায়দরাবাদের একটি জাদুঘর থেকে সোনার টিফিন বাক্স আর কয়েকটি মূল্যবান জিনিস নিয়ে পালিয়ে যায় দুই চোর। সেই টিফিন বাক্সেই খাওয়া-দাওয়া করে মনের খায়েশ মেটায় তারা। কিন্তু বিধি বাম! অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। গতকাল মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তার করে হায়দরাবাদ পুলিশ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের দুই তারিখে হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির সংগ্রহশালা থেকে নিজাম রাজবংশের ব্যবহৃত সোনার টিফিন বাক্স, রত্নখচিত বহুমূল্য কাপ-প্লেট, সোনার চামচসহ বেশকিছু সামগ্রী চুরি যায়। এরপর ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সংগ্রহশালার ভেন্টিলেশন ভেঙে দুই ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করে। পরে জানা যায়, চুরির আগ পর্যন্ত তারা পর্যটক সেজে হাভেলির সংগ্রহশালা রেকিও করে।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, চুরির পর সংগ্রহশালার বাইরে দাঁড় করানো মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় দুই চোর। সে সময় একজনকে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে চোরদের ধরতে ২২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ।

কিন্তু প্রায় ৩০০ টাওয়ারের ফোনকল ডাটা খতিয়ে দেখেও চোর ধরতে পারেনি পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশ জানতে পারে, সে সময় স্রেফ পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই ফোনে কথা বলার ভঙ্গি ধরেছিল এক চোর।

ফোন ট্র্যাক করে চোর ধরতে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি পুলিশ। এরপর মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে খোঁজা শুরু হয় চোরদের। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, হায়দরাবাদ থেকে মুম্বাইয়ের পথে পাড়ি দিয়েছে দুই তস্কর।

মুম্বাইয়ে গিয়ে একটি অভিজাত হোটেলে ওঠে দুই চোর। উদ্দেশ্য ছিল, সোনার টিফিন বাক্সসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রির গ্রাহক খুঁজে বের করা। হোটেলে অবস্থানের সময় সোনার টিফিন বাটিতে নিয়মিত খাবার খাওয়ার বিলাসিতাও করে তারা। অবশেষে সেখানে কোনো গ্রাহক না পেয়ে তারা ফের মোটরসাইকেলে করেই ফিরে আসে হায়দরাবাদে। আর সেই মোটরসাইকেলের সূত্র ধরেই পুলিশ পাকড়াও করে দুই চোরকে।

পুলিশ জানায়, ওই দুই চোরের মধ্যে প্রধান যে, তার নামে পুলিশের খাতায় ২৬টি চুরির মামলা রয়েছে। সে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’।

পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, চুরি করা ওই সোনার টিফিন বাক্সটির ওজন প্রায় চার কেজি। বর্তমান বাজারমূল্যে এর দাম প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি ভারতীয় রুপি।

এসব সামগ্রী ষষ্ঠ নিজাম মীর মেহবুব আলি খাঁর আমলের। এগুলো শেষ ব্যবহার করেন হায়দরাবাদের নিজাম মীর ওসমান আলি খাঁ ও সপ্তম নিজাম আসফ জাহ। নিজামদের সংগ্রহশালায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪৫০টি বহু মূল্যবান জিনিস রয়েছে।