মিয়ানমারে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করার আহ্বান জাতিসংঘের
মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত শেষে আজ সোমবার জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়।
ভুক্তভোগী কয়েকশ মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে জাতিসংঘ এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদনে মিয়ানমারের ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলে মতামত প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এদের মধ্যে আছে দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং ও উপসেনাপ্রধান।
মিয়ানমারের সহিংসতার শিকার এক রোহিঙ্গা নারী। ছবি : সংগৃহীত
সহিংসতা বন্ধে ব্যর্থতার দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সু চিরও তীব্র সমালোচনা করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার বারবার বিদ্রোহীদের হামলার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা বলে এলেও, প্রকৃত ঘটনা ভয়াবহ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্বিচার হত্যা, গণধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া—এসব ঘটনাকে সামরিক অভিযান পরিচালনার কথা বলে কোনোভাবেই ন্যায্যতা দেওয়া যাবে না।’
গত বছরের মার্চে মিয়ানমারে, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে, মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ ইনডিপেনডেন্ট ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠন করে।
গত বছরের ২৪ আগস্টে কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। এর পরের দিন থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। এ সহিংস অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সময় সহিংসতার শিকার আরো চার লাখ রোহিঙ্গা তার আগে থেকেই বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থান করছে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘ উল্লেখ করে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে দশকের পর দশক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার তারা।
তদন্ত পরিচালনার জন্য মিয়ানমার সরকার দেশটিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের প্রবেশ করতে না দিলেও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট চিত্র, অন্যান্য ছবি ও ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি চিকিৎসা সংস্থা ‘এমএসএফ’-এর মতে, গত বছরের আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতার প্রথম মাসেই অন্তত ছয় হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৭৩০ শিশুও ছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আরো অনেক সংস্থাই দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলে আসছে।