নিজের সঙ্গে নিজের বিয়ে!
সেলফ ম্যারেজ বা স্ববিবাহ আমাদের কাছে একেবারেই আনকোরা ও পিলে চমকে ওঠার মতো শব্দ হলেও উন্নত দেশগুলোতে তা কিছুটা পুরোনোই। ব্যক্তি স্বাধীনতা আর আত্মরতিপ্রবণ এ বর্তমান বিশ্বে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার চিরকালীন ঝক্কি থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন অনেকেই। একলা চলো রে যেন ঝিম মেরে বসতে চাইছে মানবচিন্তায়। এ যেন কবি ও ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদের ‘নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু’!
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে এক অন্তরঙ্গ সৈকতানুষ্ঠানে তিন কাছের বন্ধুকে সাক্ষী রেখে নিজেকেই বিয়ে করলেন এক নারী। নাম লিন্ডা দোকতার। জীবনশিক্ষার পর হয়েছেন আত্মপ্রেমে চ্যাম্পিয়ন। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কষ্টকর বিচ্ছেদের পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর কেউ নয়, নিজেকেই বিয়ে করবেন।
৩৪ বছরের এ নারী ওই দিন টাই-ডাই নীল ও বেগুনি রঙের গাউন পরেছিলেন। হাতে ছিল একটি আয়না। আয়নার দিকে তাকিয়ে তিনি বিবাহের মন্ত্র পড়েন!
‘এইমাত্র বিয়ে করলাম, নিজেকে!’ ২০১৭ সালে ভালোবাসা দিবসে দোকতার ইনস্টাগ্রামে লিখে পোস্ট দেন।
‘মানবজাতিকে জানাতে চাই, গতকাল আমি সবচেয়ে শক্তিশালী, আত্মপ্রেমময় স্ববিবাহ করেছি; আজ, কাল ও সবসময়ের জন্যই আমার আত্মাকে ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছি। গতকালই আমি আমার সেরা ও প্রাণের বন্ধু হয়েছি। আমিই সব। এবার তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নাও।’
অস্ট্রেলিয়ার লিন্ডা দোকতার সৈকতে স্ববিবাহ করেন। ছবি : সংগৃহীত
অপর এক পোস্টে দেখা যায়, বিয়ের পোশাক পরা দোকতার তাঁর এক বন্ধুর সামনে হাতে রঙিন ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন : দ্য গ্রেটেস্ট রেভ্যুলিউশন। যদিও অস্ট্রেলিয়াতে স্ববিবাহ বৈধ নয়। স্ববিবাহকে একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান হিসেবেই ধরা হয়।
দোকতারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইমাজেন লাভ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে স্ববিবাহ করেছিলেন। নিজের স্ববিবাহে বন্ধুই ছিল তাঁর প্রেরণা। সাবেক এ যৌনকর্মী জীবনে বহু অবমাননাকর সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তাই প্রেমের প্রতি বীতশ্রদ্ধ তিনি।
লিন্ডা দোকতার নিজেই তাঁর বাগদানের আংটি কেনেন। ফেসবুকে পোস্ট দেন। জানান, ওই অনুষ্ঠান ছিল নিজের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার লিন্ডা পোস্ট দেন, ‘আমার আরেকজন বন্ধু স্ববিবাহ করেছে। আমি এখন ভাইরাল হয়ে গেছি। আত্মপ্রেমের এই বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দিতে পেরে আমি খুবই খুশি।’ যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট এ খবর জানায়।
লিন্ডা বলেন, ‘অনেক নারীর সাথেই আমি কাজ করেছি, যাদের সম্পর্ক বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, এমনকি নির্যাতনও সহ্য করেছে।’ তিনি চান, সুস্থ অবস্থান থেকেই প্রেম হওয়া জরুরি। প্রেমে অসম্পূর্ণতা নয়, সম্পূর্ণতাই আসল।
লিন্ডা এখন স্ববিবাহে আগ্রহীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। নিজেসহ ১০০ নারী-পুরুষকে তিনি স্ববিবাহে সহায়তা করেছেন। তবে লিন্ডা জানান, স্ববিবাহ মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে আর প্রেমে পড়া যাবে না। অথবা যে মানুষটি স্ববিবাহ করেন, তিনি চান না ভবিষ্যতে আর কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবেন। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকছে।