আসামে মমতার নামে ৩ মামলা, তৃণমূল সাংসদকে হেনস্তা
সম্প্রতি ভারতের আসামে খসড়া নাগরিক তালিকা প্রকাশ করা হলে সংখ্যালঘুদের অন্যায্যভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আসামে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, মমতার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০-বি (ফৌজদারি ষড়যন্ত্র), ১৫৩-এ (দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল লাগাতে উসকানি), ২৯৪ (কুরুচিপূর্ণ ব্যাবহার) এবং ৫০৬ (ভয় দেখানো) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূলের ছয় সাংসদ, এক বিধায়ক ও এক মন্ত্রীর একটি প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গ থেকে গতকাল আসামে গিয়ে চূড়ান্ত হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আসামের শিলচরে নাগরিকপঞ্জি থেকে নাম বাদ পড়া বিপন্ন বাঙালিদের সহমর্মিতা জানানোর উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদলটি সেখানে গেলে বিমানবন্দরেই তাদের আটকে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে সাংসদের গায়ে হাত তোলা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে বলে সে সময় তাঁদের হুমকি দেন আসাম রাজ্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (ডিজি) কুলধর শইকিয়া। অবশেষে বিমানবন্দরেই ১৭ ঘণ্টা আটকে থাকার পর আজ শুক্রবার সকালে তাঁরা ফিরতি পথ ধরেন।
প্রতিনিধিদলের ওই সফর উপলক্ষে শিলচর নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের আয়োজনে স্থানীয় রাজীব ভবনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভার সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু তৃণমূলের প্রতিনিধিরা আসামে আসছেন অবহিত হওয়ার পর কাছাড় জেলা প্রশাসন গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় মতবিনিময় সভার ওপরেও। সারা এলাকায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনীকে।
এ ব্যাপারে পুলিশের ডিজি কুলধর শইকিয়া রাজ্যের শান্তি বজায় রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
অন্যদিকে তৃণমূল প্রতিনিধিদলের আসাম যাওয়াকে কটাক্ষ করে রাজ্যের বিজেপির মন্ত্রী শুক্ল বৈদ্য বলেন, আসামে গৃহযুদ্ধ লাগাতে এসেছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তাই ওদের আটকে দিয়ে ঠিক কাজই করেছে প্রশাসন।
তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে হেনস্তার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে উল্লেখ করে বলেন, তিনি যখন দুই দিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন রাজনাথ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কাউকে হেনস্তা করা হবে না। তা সত্ত্বেও যাবতীয় প্রটোকল মেনে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা আসামে গেলে তাঁদের হেনস্তা করা হয়। নারী সাংসদদের গায়েও হাত তোলা হয়। বিজেপি রাজনৈতিকভাবে নিরাশ হয়ে পড়েছে। এটাই বিজেপির শেষের শুরু।
আসামে যদি শান্তি থাকত, তাহলে শিলচর জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হলো কেন প্রশ্ন তুলে মমতা আরো বলেন, সেখানে ৪০ লাখ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জিতে না রেখে তাদের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে বিজেপি। তথ্য গোপনের চেষ্টা করছে তারা। বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ আজ বিজেপি সরকারকে নিয়ে আতঙ্কিত।
এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি চালু নিয়ে বিজেপি যে দাবি তুলেছে, সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সাহস থাকলে পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জিতে হাত দিয়ে দেখুক বিজেপি।