গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়ে সৌদি নারীরা কী বলছেন
সৌদি আরবজুড়ে মাঝরাতের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন নারীরা, অবশেষে তাঁরা চাবি ঘোরালেন, চালু করলেন ইঞ্জিন আর ছুটে গেলেন উজ্জ্বল আগামীর পথে।
নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এমন ঘোষণার পর থেকেই এ মুহূর্তটির জন্য অধীর অপেক্ষা ছিল নারীদের।
রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার যখন রোববারে গিয়ে ঠেকল, খোবারের সমুদ্রসৈকতের বাড়ি থেকে মুহূর্তে গাড়ি ছুটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন সামাহ আলগোসাইবি।
‘আমরা একটি ইতিহাস নির্মিত হতে দেখছি, আমরা তাকিয়ে আছি এক প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের ঊষালগ্নের দিকে,’ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন আলগোসাইবি।
সামাহ আলগোসাইবি নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আহমাদ হামাদ আলগোসাইবি অ্যান্ড ব্রাস’র প্রথম নারী কোনো বোর্ড সদস্য।
“সৌদি আরবের একজন নারী ব্যবসায়ী হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে নেওয়া এই পদক্ষেপে আমি কৃতজ্ঞবোধ করছি। সম্মানিত বোধ করছি এই ‘পরিবর্তন চক্রের’ অংশ হতে পেরে,” বলেন আলগোসাইবি।
এদিকে উচ্ছ্বসিত হয়ে মাঝরাতে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সৌদি শূরা কাউন্সিলের সদস্য লিনা আলমাইনা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খুব মুক্ত মনে হচ্ছে নিজেকে।’
জেদ্দা সম্মিলিত ক্রীড়া সংঘের সহপ্রতিষ্ঠাতা আলমাইনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ড্রাইভিং লাইসেন্সটি বদলে এর ভেতরেই সৌদি আরবের লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন।
জেদ্দায় পুষ্টিবিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আরেক নারী সারাহ আলওয়াসিয়া (৩৫) সৌদি পত্রিকা আরব নিউজকে বলেন, ‘আমি রোমাঞ্চিত! ১৮ বছর আগে মার্কিন দেশে আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাই। আমি ভাবতেই পারছি না যে আজ আমার নিজের শহরেই গাড়ি চালানোর দিন এসে গেছে।’
একজন মা হিসেবে আলওয়াসিয়া বলেন, ‘এতে আমার নিজের এবং পরিবারের অনেক সুবিধা হবে। যেকোনো জরুরি অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে, আর্থিকভাবেও এটা লাভজনক, আমাকে আর ড্রাইভারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।’
‘স্বাধীনতা আমার কাছে অনেক বড় একটি ব্যাপার। গাড়ি চালানো তার সামান্য অংশমাত্র। আমাদের প্রিয় দেশটি যে এই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এতে আমি আশাবাদী’ বলে আনন্দ প্রকাশ করেন আলওয়াসিয়া।
আলওয়াসিয়া আরো বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে অনেকে এখন পর্যন্ত এই পদক্ষেপ মেনে না নিলেও গাড়ি চালাতে অসুবিধা হবে না। কারণ নারীদের সমর্থন আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। আমার মনে হয়, সমাজের অধিকাংশ মানুষ খুব দ্রুতই এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেবেন।’
কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাহার নাসিফ (৬৪) বলেন, ‘কোনো কিছু দিয়েই আমার এই অনুভূতি প্রকাশ করা যাবে না, রাস্তায় নামার জন্য আমার আর তর সইছে না।’
সমাজ দীর্ঘদিন ধরেই এমন পরিবর্তনের আশা করছিল। এতে করে পুরুষদেরও অনেক শারীরিক ও আর্থিক চাপ কমবে জানান এই শিক্ষক।
নারীদের হয়রানি ঠেকাতে পাস করা আইনের উল্লেখ করে নাসিফ বলেন, ‘আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী বোধ করছি। বিশেষ করে এ সংক্রান্ত নারীদের হয়রানিবিরোধী নতুন আইন পাস করায়।’
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন-২০৩০’ কর্মসূচির আওতায় সৌদি আরবকে নতুন আর আধুনিক এক যুগে প্রবেশ করাতে দেশটিতে বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে নারীদের গাড়ি চালানোর ব্যাপারে দীর্ঘদিনের এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে করা হলো। ‘ভিশন-২০৩০’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে নতুন এক আরব নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।