কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির কাজ চলছে, আপনার কি একটা লাগবে?
আপনার মস্তিষ্ক ঠিক কতক্ষণ পর্যন্ত স্মৃতি ধরে রাখতে পারে? চাইলেই কি চিকিৎসককে দিয়ে নিজের মাথায় একটি ছিদ্র করে ছোট্ট একটা মাইক্রোচিপ বসিয়ে নিতে পারবেন? যাতে অনেক স্মৃতি ধরে রাখতে পারেন?
কথাগুলো পাগলের প্রলাপের মতো শোনালেও এই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেললেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মানুষের স্মৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। মানব মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে কোনো স্মৃতি বা তথ্য জমিয়ে রাখে, তারও একটা কাঠামো তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন। এ প্রক্রিয়াটিকে উল্টো করে সাজাতেও শিখে গেছেন তাঁরা। এখন বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলো প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন।
গত মাসে দুটি গবেষক দল একদল রোগীর স্মৃতি বাড়ানোর জন্য একটি পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় তারা এই মানুষদের মস্তিষ্কে তার প্রতিস্থাপন করে, তারের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠানোর চেষ্টা চালায়। এবং এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলেও তারা দাবি করছে।
‘ওয়েক ফরেস্ট স্কুল অব মেডিসিনে’র স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. রবার্ট হ্যাম্পসন বলেন, ‘মানব মস্তিষ্কে স্মৃতি জমা রাখার সামর্থ্যের ক্ষেত্রে এই গবেষণা এক দিকপাল হয়ে থাকবে।’
এই গবেষণার অর্থায়ন করছে ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি। আমেরিকার দুই লাখ ৭০ হাজার যোদ্ধা, যাঁরা মস্তিষ্কে আঘাত নিয়ে বেঁচে আছেন, এই প্রযুক্তি তাঁদের জীবন পাল্টে দেবে বলে মনে করছে এই সংস্থাটি।
যাই হোক, এটি যদি পুরোপুরি প্রয়োগ সম্ভব হয়, তাহলে মানুষের কাছে এর চাহিদাও অনেক বেশি হবে, তা বলাই যায়। হাজার হাজার আলঝেইমার রোগীর জন্য এ প্রযুক্তি এক আশার আলো হয়ে উঠতে পারে। কিংবা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে আমাদের মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে, হয়তো সেটাও আর হবে না।
ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সির প্রধান ও মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডা. মাইকেল কাহানা বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়টাই হলো স্মৃতি ডিকোড (রহস্য উদঘাটন) করা। এখানে অনেক প্রতারণা বা মিথ্যার কথা বলা হয়। সেখানে কিন্তু কোনো মিথ্যা নেই। সবটাই বাস্তব।’
এরপর এই রোগীদের যখন আবার পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাঁদের স্মৃতি গড়ে ১৫ ভাগ বেড়ে যায়। কাহানা বলেন, ‘এটা খুব বেশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু মস্তিষ্কের এই ১৫ ভাগ সামর্থ্য, একটি ১৮ বছর বয়স্ক মস্তিষ্কের সমান কাজ করতে পারে। এটা ৪৩ বছর বয়স্ক একটি মানুষের মস্তিষ্ককে ২৫ বছরে নিয়ে আসার মতো।’
ডা. কাহানা বলেন, ‘আমরা রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করছি না। বরং আমরা যতটুকু পারি, আমাদের স্নায়বিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে একটা সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি।’
আরেক স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. হেদার বার্লিন বলেন, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা ৪০ ভাগ, কখনো কখনো ৭০ ভাগ উন্নতি দেখতে পেয়েছি, যা বিশাল ব্যাপার।’
প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করলেন যে, মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। সুতরাং এখন আমরা জানি, মানুষের স্নায়বিক কাজগুলোকে শুধু ভাঙা নয়, কিছু নির্দিষ্ট স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা সম্ভব।’
স্নায়ুবিজ্ঞানী হ্যাম্পসন বলেন, ‘আমরা আরো কিছু রোগীর সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। শুধু স্মৃতি তৈরি এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়াই শিখব না, মস্তিষ্ক কীভাবে আলাদা আলাদা স্মৃতিকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দেয়, আমরা তাও শিখব।’
কাহানা বলেন, ‘পুরোপুরি প্রতিস্থাপনযোগ্য যন্ত্র তৈরি করে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’
তবে এই প্রযুক্তির কিছু খারাপ দিকেরও আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানী বার্লিন। তিনি বলেন, ‘এই স্নায়বিক প্রতিস্থাপন মানুষকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে ফেলবে। স্মৃতি বৃদ্ধি করা এবং না করা মানুষ। কী হবে, যদি আপনার প্রতিস্থাপিত মস্তিষ্ক কেউ হ্যাক করে নেয়? আপনার চিন্তাভাবনা এমনকি আচরণকেও প্রভাবিত করে? যেহেতু এই প্রযুক্তি বাস্তব পৃথিবীর সুবিধাদি দেবে, তাই এটি আরো উন্নত হবে। কিন্তু আমার বাচ্চাদের প্রথমে এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হবে।’