সু চির সঙ্গে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের বৈঠক, যাচ্ছেন রাখাইনে
বাংলাদেশের পর মিয়ানমার সফরে গেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল। গতকাল সোমবার বিকেলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্ঠা অং সান সু চির সঙ্গে তারা দেখা করেন। দেশটির তথ্য আলোকচিত্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, আজ মঙ্গলবার এই প্রতিনিধিদলটি হেলিকপ্টারে করে দেশটির রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করবে। যেই অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
বাংলাদেশ সফরকালে এ দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কূটনীতিকদের সঙ্গে তাদের ভয় শংকার কথা জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ তারা রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাবেন। কূটনীতিকেরা জানান, রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার আগে মিয়ানমারকে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মানসুর আল ওতাইবি প্রতিবেদকদেরকে বলেন, ‘এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতেই এই মানুষগুলো বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেনাবাহিনী বলছে, এটা শুধু সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ সাক্ষ্য দেয় যে, সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়।’
গতকাল মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে এই কূটনীতিকেরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যান।
যাই হোক, রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকেই রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষ অবলম্বন করে আসছে। রাশিয়ার নির্বাহী রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ান্সকি জানান, নিরাপত্তা পরিষদে কাছে এ সমস্যা সমাধানের কোনো জাদুর কাঠি নেই।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই সমস্যায় আমাদের নজর রয়েছে। আমরা চোখ বন্ধ করে নেই।’ গত নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়াননার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেনি।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে চাই। আমরা নিরাপত্তা এবং কেড়ে নেওয়া জমি ও সম্পত্তি চাই।’
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবৈধ শরণার্থী বলে বিবেচনা করা হয়। দশকের পর দশক ধরে তাদের নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে।
গত আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যকে ঘেরাও করে রেখেছে। দর্শনার্থী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার জন্য অঞ্চলটি নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
এই নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং বৈষম্য দূর করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উত্তর রাখাইনে পরিষদকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
ইয়াঙ্গুনের বিশ্লেষক ডেভিড মেথিসন এই সফরকে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান। তিনি এই সফরের কূটনৈতিক সাফল্য আশা করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরবর্তী সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতেই অং সান সু চি এই সহযোগী মনোভাব দেখাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।