প্রিন্সদের মুক্তি দিয়ে কত পেল সৌদি আরব
নতুন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটক প্রভাবশালী প্রিন্স, ব্যবসায়ীদের মুক্তির বিনিময়ে বেশ ভালো অর্থই কামাই করেছে সৌদি আরব সরকার। নগদ অর্থ ছাড়াও আটক ব্যক্তিদের সম্পদ ও ব্যবসার অংশও নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের শেষের দিকে সৌদি প্রশাসন শুদ্ধি অভিযানে কয়েক ডজন প্রিন্স, সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, ধনী ব্যবসায়ীসহ ৩৮১ জনকে আটক করা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন প্রভাবশীল প্রিন্স ও ব্যবসায়ী সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মুক্তি পান। মুক্তিপণের বিনিময়ে তাঁদের মুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ঠিক কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তা জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম এ ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করেছে।
এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল-মুজিব এক বিবৃতিতে এই মুক্তিপণের অর্থের পরিমাণ জানিয়ে তথ্য জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তির বিনিময়ে এখন পর্যন্ত ১০৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আদায় করেছে সৌদি আরব সরকার।
‘অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, যেমন—জমি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ারসহ আর্থিকমূল্যে পরিমাপযোগ্য সম্পদগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে,’ যোগ করা হয় বিবৃতিতে।
সৌদি আরবে গত নভেম্বরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটকদের মধ্যে সর্বশেষ শীর্ষ ধনকুবের প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল মুক্তি পেয়েছেন। তিনি গত শনিবার মুক্তি পান। তাঁকে সৌদি আরবের ওয়ারেন বাফেট বলা হয়। মুক্তির আগে প্রিন্স তালাল জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকার কোনো অভিযোগ আনেনি। তবে তিনি সরকারের সঙ্গে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, গত শনিবার প্রিন্স তালাল ছাড়াও এমবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিক প্রিন্স ওয়ালিদ বিন ইব্রাহিম এবং সৌদি রাজকীয় আদালতের সাবেক প্রধান খালিদ আল তুয়াইজিরিও মুক্তি পেয়েছেন। তবে মুক্তির বিনিময়ে কী পরিমাণ অর্থ তাঁদের দিতে হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রিয়াদের রিজ কার্লটন হোটেলে বন্দি করে রাখা হয়।
বিবিসি জানায়, এর আগে নভেম্বরের শেষের দিকে ছাড়া পান যুবরাজ মিতেব বিন আবদুল্লাহ। তাঁকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দিতে হয়েছিল। এমবিসি টেলিভিশনের প্রধান ওয়ালিদ আল ইব্রাহিমকে ছেড়ে দিতে তাঁর টেলিভিশনের শেয়ার চাওয়া হয়েছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী কমিটি গঠনের পর এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। যদিও অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখতেই এমন অভিযান চালানো হয়েছে।
সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সৌদ আল-মোজেব তখন জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এঁদের বিরুদ্ধে।