‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে সুর বদলালেন ট্রাম্প
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান নিয়েই তিনি নির্বাচনী মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন, বিজয়ী হওয়ার পর অন্তত দুটি বাণিজ্য চুক্তি আর বৈশ্বিক জলবায়ু সংক্রান্ত চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন, এবার সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই সুর বদলে ‘উন্মুক্ত আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্যের’ বার্তা দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথমে রাখবেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র একা নয়।
গতকাল শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প এই বার্তা দেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে ব্যবাসায়ীদের মধ্যে ভীতি ছিল যে, তাঁর সরকার হয়তো সংরক্ষণ করতে গিয়ে মুক্ত বাণিজ্যের পথে বাধা তৈরি করবে। কিন্তু এখন নতুন ইশতেহার শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের গলায় যে, তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ নয়, ন্যায্যবাণিজ্য চান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘অন্যায্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আর চুপ করে থাকবে না। বিশেষ করে মেধাসম্পদ চুরি, শিল্প কারখানায় ভর্তুকি, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রাণাধীন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা চুরি ইত্যাদির ব্যাপারে।‘
‘এগুলো ছাড়াও বাণিজ্যে আরো কিছু অশুভ আচরণ দেখা যায়, যা বিশ্ব বাজারকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তথা সারা বিশ্বের শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ঠিক আগের দিনই যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা করে। যাতে আমদানিকৃত ওয়াশিং মেশিন ও সোলার প্যানেলের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঘোষণা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাকালে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে স্থানীয় উৎপাদকদের বাঁচিয়ে আমেরিকাকে প্রথম করাই প্রধান বিষয় ছিল। তাঁর এই নীতি দাভোস সম্মেলনবিরোধী হয়ে যায়। কেননা, সম্মেলনটি মূল প্রতিপাদ্যই হলো বিশ্বায়ন ও সহযোগিতা বাড়ানো। তাই শুক্রবার সম্মেলনটিতে ট্রাম্পকে ঘিরে বিভক্তি দেখা দেয়।
বক্তব্যে ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরই অর্থনৈতিক অর্জনের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। বিশেষ করে বাণিজ্যিক কর বাতিল, বেকারত্বের হার কমানো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি এখানে একটা ছোট্ট বার্তা দেওয়ার জন্যে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করার মতো এর চাইতে ভালো সময় আর কখনো ছিল না। আমেরিকা ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত এবং আমরা আবারও প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবস্থায় আছি।’
‘আপনাদের চাকরি, টাকা, ব্যবসা নিয়ে আমেরিকা চলে আসুন।’
ট্রাম্প বলেন, তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ন্যায্যবাণিজ্য চুক্তি করতে চান। বিশেষ করে আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তিতে (টিটিপি) যারা ছিল তাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করতে চান তিনি। যে চুক্তি থেকে তিনি নিজেই সরে এসেছেন।
তবে সম্মেলনে বক্তৃতাকালে ও পরে প্রশ্নোত্তরকালে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর তাঁর আক্রমণাত্মক আচরণের তীব্র নিন্দা করেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রেস সব সময়ই আমার সঙ্গে সদাচরণ করেছে এবং এটা তত দিন পর্যন্ত ছিল, যত দিন পর্যন্ত আমি রাজনীতিতে আসিনি। আমি বুঝতে পারলাম, গণমাধ্যম কত নোংরা, নিচু, দুশ্চরিত্র আর মিথ্যা হতে পারে।’
সম্মেলনে বিবিসির কেটি হোপও উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এমন কিছু ঘটবে আগেই ধারণা ছিল। তবে দর্শকরা বোধ হয় আরো একটু বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ চাইছিলেন, তাই স্তদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।’