সু চির ‘নৈতিক অবক্ষয়’, কমিটি থেকে পদত্যাগ কূটনীতিকের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সরকারের উদ্যোগে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন। এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ এনেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক ওই কমিটি করা হয়েছিল চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য।
বিল রিচার্ডসন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনের জ্বালানিমন্ত্রী ছিলেন। আন্তর্জাতিক ওই কমিটির ১০ সদস্যের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের মধ্যেই এই পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি।
রিচার্ডসন বলেন, ‘আমার পদত্যাগের মূল কারণ হলো এই যে, এই উপদেষ্টা কমিটি করা হয়েছে সবার চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য।’ তিনি আরো বলেন, তিনি সরকারের এই খেলার স্কোয়াডে থাকতে চান না।
মার্কিন কূটনীতিক বলেন, কমিটির অন্যান্য সদস্যের উপস্থিতিতে গত সোমবার সু চির সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়। এ সময় তিনি রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। দেশের গোপনীয় আইন ভঙ্গের অভিযোগে সাংবাদিকদের বিচার চলছে।
সাবেক নিউমেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রিচার্ডসন বলেন, প্রতিক্রিয়ায় সু চি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। সু চি বলেন, উপদেষ্টা কমিটির এখতিয়ারে সাংবাদিক প্রসঙ্গ নেই। সেদিন রাত পর্যন্ত এ নিয়ে বিতর্কটা চলে।
এ বিষয়ে সু চি বা তাঁর কার্যালয়ের মুখপাত্র জাও তায় কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩১) ও কিয়াও সোয়ে ও (২৭)। গত ১২ ডিসেম্বর তাঁদের আটক করে পুলিশ। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, রাখাইনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির গোপন নথি ছিল তাদের কাছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেন, কমিটি থেকে রিচার্ডসনের পদত্যাগ উদ্বেগের ব্যাপার।
গত বছর এই উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে মিয়ানমার। তাদের কাজ ছিল কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
রিচার্ডসন বলেন, তাঁকে (সু চি) তাঁর লোকজন ভালো পরামর্শ দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। রাখাইন ইস্যুতে তিনি নৈতিক নেতৃত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলোর জন্য আমি অনুতপ্ত।’
সু চির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন রয়টার্সকে বলেন, তিনি কমিটির অন্য সদস্যের বুধবার রাখাইন পরিদর্শন নিয়ে যান। কিন্তু রিচার্ডসন যাননি। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খুশি ছিলেন না। কিন্তু এর কারণ আমি জানি না।’
কমিটির সভাপতি থাইল্যান্ডের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ত সাথিরাথাই। রিচার্ডসন তাঁর সম্পর্কেও কড়া কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কমিটির চেয়ারম্যান সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিক নন।
রিচার্ডসন বলেন, ‘তিনি (কমিটির চেয়ারম্যান) খুব ভয়ংকর ও অসত্য কথা আওড়েছেন। তিনি বলেছেন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) মৌলবাদী ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আরসাকে সহায়তা করছে।’ রাখাইনভিত্তিক বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আমি (আরসা) সেনাবাহিনীর ওপর কয়েকদফা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে।
কমিটির আরেক সদস্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোয়েলফ মেয়ের বলেন, ‘কেউ যদি বলেন আমরা কেবল ক্রীড়নক বা সরকারের পক্ষে কাজ করছি তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ অসত্য কথা।’
গত বছর ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় আরসা বিদ্রোহীরা। এরপর রাখাইনে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। এতে বহু মানুষ নিহত হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাবে নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছে বহু নারী ও শিশু। অভিযানের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও করেছে মিয়ানমার। তবে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা মত দিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না্।