বসিরহাটে ভাসছে টিনের নৌকা
প্রতিবছরের মতো এই বছরও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়া ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার পানিতে ভাসছে। একদিকে অবিরাম বৃষ্টি আর অন্যদিকে ইছামতীর উপচেপড়া পানিতে পুরো অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যাকবলিতরা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে জিনিসপত্র ও গোবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরগুলোতে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বন্যাদুর্গতরা জানায়, আগের বছরগুলোর মতো এবারও তাদের তিন মাস ত্রাণ শিবিরে কাটাতে হবে। এর আগে পানি কমবে না। বন্যাদুর্গত এলাকায় যাতায়াত এবং নিজেদের বাস্তুভিটার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বানভাসিদের একমাত্র ভরসা ছিল কলার ভেলা। কিন্তু এবার তারা নৌকায় চড়ে যাতায়াত করছে। এ নৌকা কাঠের নয়। স্টিল বা টিনের তৈরি। বিশেষ ধরনের এই নৌকার উদ্ভাবক বসিরহাটের চারঘাটের সাইকেল মিস্ত্রি ধীমান মণ্ডল।
বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগের কথা ভেবেই ছেলে বিকাশ মণ্ডল ও একজন দক্ষ কারিগর নিয়ে টিন ও স্টিলের নৌকা তৈরির কাজে নেমেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই নৌকা বানভাসিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এর চাহিদা।
ধীমান মণ্ডলের ছেলে বিকাশ মণ্ডল বলেন, বন্যাদুর্গত মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই আমরা এই টিনের নৌকা তৈরি শুরু করেছি। এই নৌকায় চড়ে অনায়াসেই এক থেকে দুইজন যাতায়াত করতে পারে।
তবে দাম বেশি হওয়ায় বন্যাদুর্গতদের পক্ষে এই নৌকা কেনা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। টিনের তৈরি নৌকার দাম দুই হাজার ২০০ রুপি থেকে আড়াই হাজার রুপি। আর স্টিলের নৌকার দাম দুই হাজার ৭০০ রুপি থেকে তিন হাজার রুপি।
তারপরও চাহিদা কম নয়। তাই দিনরাত এক করে নৌকা তৈরি করে চলেছেন ধীমান। তিনি জানান, টিনের নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ছে প্রায় দেড় হাজার রুপি। আর স্টিলের নৌকার ক্ষেত্রে খরচ পড়ছে প্রায় এক হাজার ৭০০ রুপি। মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় তৈরি হয়ে যাচ্ছে এক একটি নৌকা। এই ব্যবসায় লাভের অঙ্কও মন্দ নয়। গত এক মাসে ৫০টিরও বেশি নৌকা বিক্রি হয়েছে।