‘লড়াই ছাড়া পথ ছিল না’, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের টুইট
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা দাবি করেছেন, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেভাবে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছিল, তাতে নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজনকে রক্ষার জন্য তাদের সামনে লড়াই ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিল না।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত বলেও মনে করে বিদ্রোহীরা। গতকাল শনিবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা ‘আরসা’র এক টুইট বার্তায় এসব মন্তব্য করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসা এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর পরই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনো শরণার্থীদের ঢল অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করলেও বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমারের সরকার তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
২৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্রোহীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ চালালেও গত শুক্রবারের আগে এ সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানা যায়নি। সেদিন বিদ্রোহীদের ‘অ্যাম্বুসের’ (অতর্কিত হামলা) মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর কয়েক সদস্যও আহত হন।
‘বার্মার (মিয়ানমার) সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে যে সন্ত্রাস চলছে, তার থেকে রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা, উদ্ধার ও প্রতিরোধের জন্য আরসার সামনে লড়াই ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না’, বিদ্রোহীদের নেতা আতা উল্লাহ স্বাক্ষরিত টুইটে বলা হয়।
নিজেদের ভবিষ্যত রাজনৈতিক অবস্থান ও মানবিক বিষয় নিয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলেও মনে করে আরসা।
শুক্রবারের হামলা সম্পর্কে আরসা দায় স্বীকার করলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি। রাখাইনের ওই এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ।
বিদ্রোহীদের এই টুইট সম্পর্কে মিয়ানমারের সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারা ‘আপস’ করবে না।
আরসার দাবি, তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের মূলনীতি ‘রক্ষা করা, উদ্ধার করা ও প্রতিরোধ গড়া’। আরসা নিজেকে কোনো ধরনের ‘সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর তকমা’ থেকে দূরে রাখার দাবি করে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশের নাগরিক বলে মনে করে না। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী।