‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পিটিয়েছিলাম, এক ঘণ্টাও লাগেনি’
ঘটনা ১৯৪৭ সালের। ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই সে সময় ভারত ভাগের দাবি ওঠে। দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সংঘর্ষ। সংঘর্ষে নিহত হয় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ।
পুরোনো সে দিনগুলোর কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা শহরের বাসিন্দা মুহাম্মদ আকরাম। তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সময় নিরঞ্জন দাস বাগগা নামের এক হিন্দু রাজনীতিবিদকে হত্যায় সাহায্য করেছিলেন তিনি। এমনকি হত্যায় অংশ নিয়ে তিনি গর্বিত বলে জানান আকরাম।
সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আকরাম সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘সেদিন সংঘর্ষে একজন মুসলিম নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে যান নিরঞ্জন। তখন কেউ তাঁর মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে শোরগোল পড়ে যায়। সেদিন যারা তাঁকে মারেনি তারা কাপুরুষ।’
আকরাম আরো বলেন, ‘এরপর আমার সঙ্গে কয়েকজন লোক গিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নিরঞ্জনকে পিটাতে লাগলাম। তাঁকে হত্যা করতে এক ঘণ্টাও সময় লাগেনি।’
ওই হত্যার জন্য কোনো অনুশোচনা আছে কি না জানতে চাইলে আকরাম বলেন, ‘আমাদের (মুসলিম) লোকজনকে হত্যা করা হচ্ছিল। আমরা কীভাবে সহ্য করতাম? আরো খুন করতে চাইতাম। যা করেছি তার জন্য আমি গর্বিত।’
নিরঞ্জন হত্যার পর তাঁর পরিবার ভারতে চলে যায়। বর্তমানে পরিবারটি বাস করছে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের চণ্ডীগড় শহরে।
নিরঞ্জনের ভাতিজা রমেশ বাগগা বিবিসিকে বলেন, “তিনি একজন বিদ্বান মানুষ ছিলেন। আমাদের পরিবারের মাথা ছিলেন তিনি। ছেলেবেলায় আমাদের খুব ভালোবাসতেন। আমার মনে পড়ে, একদিন আমাকে তিনি কোলে করে একটি দোকানে নিয়ে যান। আর বলেন, ‘তোমার যা খুশি নিতে পারো।’”
রমেশ আরো জানান, তাঁর চাচা পরিবারের প্রধান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
রমেশের ওই বক্তব্যের ভিডিও দেখানো হয় আকরামকে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নিরঞ্জনের পরিবারের প্রতি তাঁর কিছু বলার আছে কি না।
জবাবে আকরাম বলেন, ‘নিরঞ্জনের বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। সে একজন নেতা ছিল। পরিস্থিতি এতই প্রতিকূল ছিল যে কে, কী করে, তা বিবেচনার সময় ছিল না। তার পরিবারের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। কিন্তু তাতে কি আদৌ কিছু আসে-যায়? ৭০ বছর পর এসে অনুশোচনা করা অর্থহীন।’