পর্নো সাইটে বিক্রির চেষ্টা, বর্ণনা দিয়ে কাঁদলেন সেই মডেল
টানা ছয়দিন অপহৃত থাকা এবং হাতকড়া পরে নগ্ন ফটোশুটে বাধ্য হওয়ার ঘটনা নিয়ে সন্দেহ ওঠায় ভেঙে পড়েছেন ব্রিটিশ মডেল ক্লোয়ে আইলিং (২০)। আজ সোমবার দক্ষিণ লন্ডনের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আইটিভির ওই অনুষ্ঠানে চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করে অপহরণ, জোর করে নগ্ন ছবি তোলা, পর্নো ওয়েবসাইটে বিক্রির চেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দেন ক্লোয়ে। এমনকি যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলেও জানান তিনি।
ক্লোয়ে জানান, কেমন নাটকীয়ভাবে তাঁকে অচেতন করা হয়। এরপর মুখে টেপ আটকে, হাত-পা বেঁধে একটি জিপ লক ব্যাগে ভরে গাড়ির পেছনের বনেটে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আইটিভির ওই অনুষ্ঠানে এই ব্রিটিশ মডেল বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে অনেকেই আমার এই কাহিনীর বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। যেমন, আমাকে যখন জুতা কিনতে নিয়ে যাওয়া হয় তখন কেন আমি পালিয়ে যাইনি, এই প্রশ্ন করা হচ্ছে। আসলে এটা তাঁদের জন্য বলা সহজ, কিন্তু আমার পরিস্থিতি এতটা ভালো ছিল না। আমি একজন হত্যাকারীর সঙ্গে ছিলাম, যে সব সময় কাছে অস্ত্র রাখত। আমাকে ছুরি বের করে ভয় দেখানোও হয়েছিল।’
ক্লোয়ে বলেন, তিনি যদি পালিয়ে কোনো ইতালিয়ান নাগরিকের কাছে সাহায্য চাইতেন আর সেই ইতালিয়ান যদি ইংরেজি যদি না জানে তাহলে তিনি আবার বিপদে পড়তেন। তাই নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাননি তিনি।
ব্ল্যাক ডেথ নামের একটি দল এই ব্রিটিশ মডেলকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি জানান, অপহরণের পর তাঁকে তুরিনের কাছের একটি জনবিচ্ছিন্ন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। ছয়দিনের বন্দিজীবনে তাঁকে অনলাইনে বিক্রি করার চেষ্টা চলে।
যখন ফটোশুটের জন্য স্টুডিওতে যান, তখনই প্রথম সন্দেহ হয় ক্লোয়ের। কারণ সেখানে দরজায় সম্ভাষণ জানানোর কেউ ছিল না। প্রথাগত স্টুডিওগুলোর মতো ছিল না সেখানকার পরিবেশ। এর মধ্যে মুখোশধারী এক ব্যক্তি এসে তাঁর নাক-মুখ চেপে ধরেন। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে হাতে কোনো একটি ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ব্যথা পাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী হচ্ছে। কেন তারা আমার সঙ্গে এমন করছে।’
এভাবেই অপহরণের দিনের কথা বর্ণনা করছিলেন ক্লোয়ে। যাঁকে যৌনদাস হিসেবে বিক্রির চেষ্টা চলছিল। তিনি বলেন, ‘যখন জ্ঞান ফিরল, নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটি জিপ লক ব্যাগে। আমার মুখ টেপ দিয়ে আটকানো ছিল, হাতে আর পায়ে পরানো ছিল হাতকড়া। এটা ছিল ভয়ঙ্কর। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছিলাম এবং বাঁচার পথ খুঁজছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আসলে আমার সঙ্গে কী হচ্ছে।’
বনেটের ভেতর থেকে চালককে উদ্দেশ্য করে চিৎকারের চেষ্টা করছিলেন বলে জানান ক্লোয়ে। একসময় গাড়ি থামলে বনেটের ফাঁক দিয়ে দেখতে পান অপহরণকারীরা একটি খালি স্যুটকেস নিয়ে আসছে। তখন তিনি নিশ্চিত হন যে ওই স্যুটকেটে ভরা হবে তাঁর মরদেহ। সে সময় তিনি শুধু একটি যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর কথা ভাবছিলেন। সে কারণে যতটা সম্ভব শক্ত থাকার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
উদ্ধারের পর তিন সপ্তাহ ইতালির মিলানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে রাখা হয়েছিল ক্লোয়েকে। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর দেশে পাঠানো হয় তাঁকে। সে কারণেই ব্রিটেনের লোকজন তাঁকে কাঁদতে দেখেনি বলে জানান ক্লোয়ে। বলেন, মিলানে অবস্থান করা প্রায় প্রতিটি দিনই কান্নাকাটি করে কেটেছে তাঁর। এখনো নিজের ঘর ছেড়ে বের হতে ভয় পান তিনি, হঠাৎ কোনো আওয়াজ শুনলে চমকে ওঠেন, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠেন কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
এই তিন সপ্তাহ পুলিশ তাঁকে বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে বলে জানান ক্লোয়ে।
এর আগে গত ৭ আগস্ট ক্লোয়ে আইলিংকে অপহরণ করে পর্নো সাইটে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে পোল্যান্ডের নাগরিক লুকাজ হারবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফটোশুটের কথা বলে ক্লোয়েকে ইতালির মিলানে আমন্ত্রণ জানান লুকাজ। এ ছাড়া ওই ফটোশুটের জন্য পারিশ্রমিকের আগাম অর্থও পরিশোধ করেন লুকাজ হারবা। এরপর ক্লোয়ে ইতালির মিলানে পৌঁছানোর পর তাঁ চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগে অচেতন করে ফেলা হয়। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ইতালির উত্তরাঞ্চলের তুরিন শহরে। এখানে ওই মডেলকে কয়েকদিন বন্দি করে রাখা হয়। এ ছাড়া হাতকড়া পরিয়ে নগ্ন হয়ে যৌন উত্তেজক ফটোশুট করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন ক্লোয়ে।
এরপর লুকাজ পেজ থ্রির জনপ্রিয় মডেল ক্লোয়ে আইলিংকে পর্নো সাইটে বিক্রির জন্য দুই লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড (দুই কোটি ৮৪ লাখ টাকা) দাম হাঁকেন। এ সময় ইতালির এক অপরাধচক্র ‘মাফিয়া গ্যাং’-এর চোখ পড়ে এ বিজ্ঞাপনটির ওপর। ওই অপরাধচক্রের একজন কৌশলে হারবার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, এক সন্তানের মা আইলিংয়ের ওপর অত্যাচার ইতালিতে চলবে না। পরে তুরিনের খামারবাড়ি থেকে আইলিংকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরে ওই অপরাধ চক্রের তত্ত্বাবধানেই লুকাজ হারবা মডেল আইলিংকে নিয়ে মিলানের যুক্তরাজ্য দূতাবাসে যান। সেখানে লুকাজকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে বসবাসকারী লুকাজ জানান, ইন্টারনেটে ছবি দেখে তিনি আইলিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
উদ্ধার পাওয়ার পর ইতালির পুলিশের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ক্লোয়ে। এক টুইটে ক্লোয়ে বলেন, ‘আমি এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি। অনেকবার ভেবেছিলাম আমি বোধহয় মারা যাচ্ছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমাকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার জন্য। ইতালির পুলিশ ও আমার ভক্তরা যাঁরা আমার জন্য দুশ্চিন্তা করেছেন তাঁদের আমি ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই।’