খরচ বেশি, অটিস্টিক শিশুকে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
অটিস্টিক শিশুর খরচ বেশি, আর এ কারণে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক শিশু ও তার পরিবারকে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে বলেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। একই সঙ্গে তাদের জোর করে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে পরিবারটি আশঙ্কা, অটিস্টিক শিশু নিয়ে বাংলাদেশে গেলে বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হবে তাদের।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া চার বছর বয়সী অটিস্টিক শিশু ফায়াদ হক এবং তার পরিবারকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফায়াদের অটিজম চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়ার করদাতাদের ওপর বোঝা বাড়বে।
দেশটির ইমিগ্রেশন-মন্ত্রী পিটার ডাটন জানিয়েছেন, বাবা মোহাম্মদ হক ও মা তনিমা সুলতানাসহ ফায়াদকে আগামী দুই মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যেতে হবে। সেই দেশে চলে যেতে হবে যে দেশটি এক দশক আগে ছেড়ে এসেছিলেন ফায়াদের মা-বাবা। যে দেশটিতে কখনো যায়নি ফায়াদ।
নাইননিউজকে ফায়াদের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে এখানে জন্মেছে, সে কখনো আমার দেশ দেখেনি। সে অস্ট্রেলিয়ায় বড় হয়েছে এবং শুধু অস্ট্রেলিয়াকেই জানে।’
জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলে তার পরিবারকে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন ফায়াদের বাবা মোহাম্মদ হক। এমনকি বাংলাদেশের কোনো স্কুলে ফায়াদ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে না বলেও জানান তিনি। মোহাম্মদ হক বলেন, ‘আমাদের (বাংলাদেশে) বিশেষ ধরনের শিশুদের জন্য আলাদা কোনো স্কুল নেই। এই ধরনের শিশুরা সাধারণ স্কুলগুলোতে যায় এবং অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।’
সম্প্রতি পূর্ব সিডনিতে নিজের আবাসন ব্যবসা শুরু করেছেন মোহাম্মদ হক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলে সন্তানের অটিজমের জন্য তাঁর স্ত্রী তনিমাকে বিদ্রুপের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমাজে আমার স্ত্রী তনিমাকে ভীষণ খারাপভাবে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে বলা হবে, জীবনে কোনো খারাপ কাজ করার শাস্তি হিসেবেই অটিস্টিক সন্তানের জন্ম দিয়েছে সে। এমনকি তার নিজের পরিবারেও তাকে শুধু একটি আসবাবপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
মোহাম্মদ হক জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সন্তানের প্রতিবন্ধী হওয়াকে মায়ের অপকর্মের ফলাফল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এমনকি সেই মাকে ডাইনি বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
ফায়াদের জন্মের আগেই অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করেছিলেন মোহাম্মদ হক। তবে সেই ফাইল তিন বছর ধরে পড়ে ছিল। যখন সেটি মূল্যায়নের জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগে আসে তখন ফায়াদের বয়স দুই বছর। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ ফায়াদ স্বাস্থ্য সম্পর্কে মন্তব্য করে, ‘ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সামান্য থেকে মাঝারি মানের দুর্বলতা রয়েছে।’
ফায়াদের লেখাপড়ার জন্য অতিরিক্ত চার লাখ ৫৬ হাজারের বেশি মার্কিন ডলার ব্যয় হতে পারে বলে অনুমান করা হয়।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগের আইনজীবী অ্যাডাম খেজ বলেন, পরিবারটি বিশ্বাস করে যে এই পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্যসেবা ও কমিউনিটি সার্ভিস খাত থেকে আসতে পারে।
ফায়াদের শরীরের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে মোহাম্মদ হক মনে করছেন, সব মিলে ৩০ হাজার ডলারের কিছু বেশি পরিমাণ অর্থ ফায়াদের উন্নতির জন্য দরকার।
এর আগে মে মাসে এ ধরনের একটি ঘটনা নিয়ে বেশ হইচই পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। সে সময় টাইরন নামের একটি ছেলের অটিজমের কারণে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময় মা মারিয়া সিলভিয়া এবং ওই ছেলেটিকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার অনুমতি দেন পিটার ডাটন। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে একজন অল্প বয়সী ছেলেকে আমরা সহায়তা করতে পারছি। যার চিকিৎসা এবং শিক্ষা সহায়তা প্রয়োজন। উদার দেশ হিসেবে আমরা এটি করতেই পারি।’
ওই সময় যদি তাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে মোহাম্মদ হক ও তার পরিবারকে কেন দেওয়া হবে না- এ ব্যাপারে অভিবাসন বিভাগের কাছে প্রশ্ন রাখে নাইন নিউজ। বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, ‘সাধারণত বিশেষ এবং ব্যতিক্রমী ঘটনার ক্ষেত্রেই মন্ত্রী এসব ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন। ফায়াদের ভিসা হয়নি, কারণ সে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
এদিকে ফায়াদের পরিবারের পক্ষে লিবারেল পার্টির নেতা ক্রেইগ লন্ডি সরকারের কাছে দেশটিতে অবস্থানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘একটা নিরাপদ জীবনের জন্য তারা (ফায়াদের পরিবার) কাজ করে গেছে। তারা এটা বিশ্বাস করে যে ফায়াদ তাদের দায়িত্ব এবং যেকোনো মূল্যে তার চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে প্রস্তুত ছিল। আশা করি ভবিষ্যতে ফায়াদ নিয়মিত স্কুলে যাবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সমর্থ হবে।’
এ ছাড়া তাদের যেন অস্ট্রেলিয়া থেকে বিতাড়ন না হয় সে জন্যমন্ত্রী ডাটনের উদ্দেশে চেঞ্জ ডটওআরজি একটি পিটিশন দাখিল করেছেন মোহাম্মদ হক।