মসুলে ‘আত্মঘাতী নারী’দের ব্যবহার করছে আইএস
ইরাকের মসুল শহর দখলের দ্বারপ্রান্তে এসে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে সেনারা। আইএস সদস্যরা আত্মঘাতী নারী জঙ্গিদের ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে তারা।
২০১৪ সালে ইরাকের প্রাচীন শহর মসুল দখল করে একে কার্যত রাজধানীতে পরিণত করে আইএস। এর পর থেকে শহরটি দখলে ইরাকি বাহিনী লড়াই শুরু করে আইএসের সঙ্গে। বেশ কিছুদিন আগে শহরটিতে আইএসের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল গ্র্যান্ড আল-নুরি মসজিদ দখল করে নেয় ইরাকি বাহিনী। তারা আশা করছে, কিছুদিনের মধ্যেই পুরো শহরটি থেকে আইএসকে বিতাড়িত করা যাবে।
ইরাকি সেনাদের দাবি, তাঁরা অভিযান চালাতে গিয়ে আত্মঘাতী হামলার শিকার হচ্ছেন। এ হামলাকারীদের অধিকাংশই নারী।
আইএসের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে মসুলে জোর হামলা চালিয়ে আসছে ইরাকি বাহিনী। তাদের সঙ্গে এই অভিযানে যোগ দিয়েছে কুর্দিশ পেশমেগা ফাইটারস, সুন্নি ও শিয়া মিলিশিয়ারা। আর তাদের সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ও সামরিক উপদেষ্টারা।
ইরাক সরকার ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেই মসুলের পূর্বাঞ্চলকে মুক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলের সংকীর্ণ ও পেঁচানো পথঘাটের কারণে ইরাকি বাহিনীকে কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
এ সম্পর্কে ইরাকের কাউন্টার-টেররিজম সার্ভিসের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল গনি আল-আসাদি সংবাদমাধ্যম এএফপিকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে পুরোনো এই শহরে (মসুল) অভিযান চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেনাদের।’
আসাদি আরো জানান, আইএস যোদ্ধারা এই (মসুলের প্রকৃতিগত) সুবিধাটুকু পাচ্ছে। এটা অবশ্য স্নাইপারধারীদের হাত থেকে ইরাকি সেনাদেরও রক্ষা করছে।
আরেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামি আল-আরিদি এএফপিকে বলেন, ‘শত্রুরা (আইএস) আত্মঘাতী বোমারুদের ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তারা নারী বোমারুদের ব্যবহার করছে। গত তিন দিনে আশপাশের এলাকায় (মসুলের) এ রকম বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে তারা প্রতিরোধের জন্য স্নাইপার ও বোমা ব্যবহার করত।’
আল-আরিদি জানান, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক, কিশোরী।
এপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত সোমবার ইরাকি সেনাদের ওপর দুটি আত্মঘাতী হামলা চালায় নারীরা।
আত্মঘাতী এসব হামলা এড়াতে অভিযানে অংশগ্রহণকারী কমান্ডাররা ওই এলাকার নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন সেনাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বোরকা খুলে যান। পাশাপাশি পুরুষদেরও জামা খুলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, আইএস মসুলের ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আটকে রেখে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইরাকের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ধারণা করছে, মসুলে এখন তিন শতাধিক আইএস সদস্যও নেই। অক্টোবরে যখন আইএসবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিল, সেখানে তখন ছয় হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা ছিল।
এ অভিযানে অংশ নেওয়া আরেক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া রসুল ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘বিজয় অতি সন্নিকটে। এ যুদ্ধ পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে।’