‘নৈতিকতা কি দাবি করছে সেটাই রাজধর্ম’
বরাবরের ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। রাজনৈতিক জীবনের পড়ন্ত লগ্নে এসে ফের জ্বলে উঠতে শুরু করেছেন তিনি। তাঁর এক একটি মন্তব্য ঘিরে টালমাটাল হয়ে উঠছে ভারতের শাসক দল বিজেপি শিবির। ‘নৈতিকতা কি দাবি করছে সেটাই রাজধর্ম’ এই মন্তব্যে বিজেপির লৌহপুরুষ খ্যাত লাল কৃষ্ণ আদভানি আবার ভারতের রাজনীতিতে আলোচনায় এসেছেন।
গত শনিবার নিজ বাড়িতে বসে এক সংবাদপত্রের সঙ্গে আলাপচারিতায় এল কে আদভানি এ মন্তব্য করেন। প্রবীণ এই নেতার এ মন্তব্য ঘিরে বিজেপি শিবিরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কদিন আগেই আদভানি ভারতে জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত দিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন। এবারে রাজধর্ম পালনের বার্তা দিয়ে তিনি আবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
ললিত মোদি কাণ্ডে যখন সুষমা স্বরাজ এবং বসুন্ধরা রাজে ইস্যুতে ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ সময় এল কে আদভানির মুখে এই রাজধর্ম পালনের বার্তা মূলত মোদি সরকারকে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
আদভানি রাজধর্ম পালনের কথা বলার পাশাপাশি নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৯৬ সালে হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম উঠে আসায় বিজেপির সাংসদ পদ থেকে ইস্তাফা দেন তিনি। টানা দুই বছর জনপ্রতিনিধির আসন থেকে নিজেকে দূরেও সরিয়ে রেখেছিলেন। পরে কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৯৮ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। স্বভাবতই আদভানির এই বক্তব্য সুষমা ও বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন চাপ বাড়াল মোদি সরকারের ওপর তেমনি আপনি আচারি ধর্ম প্রবাদ মেনে ললিত মোদি কাণ্ডে সুষমা ও বসুন্ধরার নিজেদের উদ্যোগে ইস্তাফা দেওয়া উচিত কি না সে বিতর্কও উসকে দিলেন তিনি। তবে এই প্রসঙ্গে মোদি ও সুষমা কিংবা বসুন্ধরার কী করা উচিত সেই প্রসঙ্গে আদভানি অভিমানের সুরে বলেন, এখন তিনি এসব থেকে অনেক দূরে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনো জায়গা তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কথা বলতে পারি শুধু। অন্যরা কে কী করবেন, কার কী বিষয়, কী সমস্যা, আমি জানি না। আর আমি এসব নিয়ে কোনো মন্তব্যও করব না।’
এল কে আদভানি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করাই একজন রাজনীতিকের সব থেকে বড় দায়িত্ব। নৈতিক নীতি কী দাবি করছে সেটা পালন করাই আসল রাজধর্ম। একজন রাজনীতিকের উচিত আম-আদমির কাছে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা। আদভানি বলেন, ‘সারা জীবন রাজনীতি করতে গিয়ে দুর্নীতির আঁচ যাতে গায়ে না লাগে তার জন্য সতর্ক থেকেছি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) শাখায় আমাদের শেখানো হয়েছিল সততাই সব থেকে বড় মানবিক গুণ। দুর্নীতির প্রশ্নে আমরা যেন আপস না করি।’