২৩ বছর বয়সী কাশ্মীরি তরুণের মিলিয়ন ডলার আয়ের প্ল্যাটফর্ম
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে থাকা কাশ্মীরে প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের চিন্তা করা দুঃসাধ্য স্বপ্নের মতোই। কিন্তু, এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও সেখানে এগিয়ে যাওয়া এবং জনসাধারণের জন্য সুযোগ তৈরি করার মতো কিছু সাহসী মানুষ রয়েছে। তেমনই একজনের নাম জিবরান গুলজার। তিনি এই উপত্যকার দ্রুত বর্ধনশীল খাদ্য ও মুদিপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাটোস’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
যাত্রা শুরুর প্রথম সাত মাসের মধ্যে ‘গ্যাটোস’ এক মিলিয়ন (১০ লাখ) মার্কিন ডলারেরও বেশি আয় করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বড় উদ্যোগ এই ‘গ্যাটোস’। এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৫০টির বেশি ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েছে গ্যাটোসের। বার্তা সংস্থা এএনআই’র বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।
জিবরান গুলজার বলেন, ‘যখন আমরা প্রথম গ্যাটোস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলাম তখন বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। কাশ্মীরের প্রতিকূল প্রযুক্তির কারণে গ্যাটোস শুরুর সম্ভাবনা অন্ধকার বলে মনে হয়েছিল। এখানকার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, উচ্চ গতির ইন্টারনেটের অভাব ছিল বড় বাধা। আমাদের কাছে কেবল একটি টু-জি নেটওয়ার্ক ছিল, যা ছিল বড় সমস্যা।’
জিবরান আরও বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এই আলোচনা সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আমরা গ্যাটোসকে টু-জি সংযোগের আওতায় পরিচালিত করতে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা প্রথমদিকে এই প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। তবে আমাদের যাত্রা সফল হয়েছে। মাত্র সাত মাসে আমরা দুই লাখ ৫০ হাজার ডেলিভারি দিয়েছি।’
জিবরান গুলজার বলেন, ‘উচ্চ গতির ইন্টারনেটের অভাব এবং স্বল্প প্রযুক্তির মতো মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। তারপরেও আমরা কেবল উপত্যকায় আড়াই লাখের বেশি অর্ডার ডেলিভারি দিয়েছি। আমরা আমাদের গ্রাহকদের কম দাম এবং দ্রুত পণ্য ডেলিভারির প্রস্তাব দিই-এটিই সম্ভবত সফলতার কারণ। শ্রীনগর, জম্মু, লাদাখ, বদেরওয়াহ এবং উধামপুরের মতো শহরগুলোতে আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত হয়েছে।’
এই উদ্যোগটি পাঞ্জাব, হরিয়ানাসহ অন্যান্য রাজ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশব্যাপী জায়গা দখল করছে। গ্যাটোস দলটি প্রযুক্তির অগ্রগতি কাজে লাগিয়ে বর্তমানে তাদের সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানেও আধাঘণ্টার কম সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে।
গ্যাটোস’র চিফ অপারেটিং অফিসার তোফায়েল আকরাম বলেন, ‘আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। রাজনৈতিক থেকে শুরু করে অবকাঠামোসংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সমস্যা মোকাবিলা করেছি। শুধু আমাদের গ্রাহককেন্দ্রিক সিস্টেমের কারণে আমরা কাশ্মীরে ছয় মাসেরও কম সময়ে আয় করেছি এক মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা জিবরান গুলজার বলেন, ‘এখন আমরা কাশ্মীর ও এর আশপাশের রাজ্যগুলোতে সফলভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমরা দেশজুড়ে কার্যক্রম বিস্তারে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা কাজের মান বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তির উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আমাদের ডেলিভারি পার্টনার হিসেবে আরও যুবক নিয়োগ করব। কাশ্মীরে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাটোসের মাধ্যমে আমরা শত শত লোককে নিয়োগ দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা এই চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যস্থির করেছি। ২০২২ সালের মধ্যে কাশ্মীরে পাঁচ হাজারের বেশি লোক নিয়োগ করা হবে। এটি আমাদের প্রত্যাশা।’