‘১০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাস সর্বোচ্চ মাত্রায় ছড়াতে পারে’
এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সর্বোচ্চ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চীনের একজন শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগ বিশেষজ্ঞ। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ঝং নানশান নামের ওই বিশেষজ্ঞ।
ঝং নানশান বলেন, ‘কবে নাগাদ (করোনাভাইরাস) ছড়ানোর হার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন। তবে আমার মনে হয়, এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এটা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছাবে। এবং এরপর আর বড় পরিসরে এটা ছড়াবে না।’
নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঝং নানশান। তিনি চীনের প্রকৌশল একাডেমির একজন পণ্ডিত।
‘মহামারি মোকাবিলার দুটি চাবিকাঠি রয়েছে—যত দ্রুত সম্ভব শনাক্তকরণ এবং দ্রুততর সময়ের মধ্যে আক্রান্তদের আলাদা করে ফেলা। এগুলো হলো, সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে কাযর্কর দুটি পন্থা,’ যোগ করেন ঝং নানশান।
চীনা এই বিশেষজ্ঞ আরো জানান, সিংহভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সাধারণ দুটি লক্ষণ হলো—জ্বরের আক্রান্ত হওয়া এবং দুর্বল বোধ করা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে ফেলা ও পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য কার্যকর সময়কাল ১০ থেকে ১৪ দিন। এই সময়কাল শেষ হওয়ার পরও যাঁরা অসুস্থ থাকবেন, তাঁদের যথাযথ শুশ্রূষা দেওয়া হবে। আর যাঁরা আক্রান্ত থাকবেন না, তাঁদের আলাদা করে চিকিৎসা লাগবে না।
এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে হাসপাতালগুলোতে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ রাখার পরামর্শ দেন ঝং নানশান।
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ছয় হাজার মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। এর কারণ অব্যাহত মৃত্যু আর ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ। চীনে যে গতিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তা সামাল দিতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে চীন সরকারকে।
ভয়ংকর এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪টিরও বেশি শহর অবরুদ্ধ করে দিয়েছে চীন। সেখানে সব ধরনের যান চলাচল ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শহরে কেউ প্রবেশ করতে কিংবা শহর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শহরগুলোর পাঁচ কোটির মতো মানুষ। নতুন করে আরো বেশ কয়েকটি শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, চীন থেকে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নাগরিকদের চীন থেকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আরো বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং গোটা চীনে নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার ৯৭৪ জনে। এ ছাড়া আরো অন্তত ৯ হাজার ২৩৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চীন ছাড়াও আরো ১৬টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।