সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচারের বিপক্ষে ভোট অধিকাংশ রিপাবলিকানের
সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচারের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে দেশটির কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। তবে সিনেটে বেশির ভাগ রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্পের পাশেই আছেন। অভিশংসন প্রস্তাব খারিজ করা নিয়ে সিনেটে ভোটাভুটিতেই তা পরিষ্কার হলো। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। এখন তা পাঠানো হয়েছে সিনেটের কাছে। সিনেটে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সিনেটে সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আগে গতকাল মঙ্গলবার ভোটাভুটি হয়েছে। ভোট নেওয়া হয়েছে অভিশংসের বিচার বা ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল বাতিল করা হবে কি না, তা জানার জন্য। সেখানে দেখা গেল, ৪৫ জন রিপাবলিকান সিনেটর ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এবং ৫০ জন ডেমোক্র্যাট এবং পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটর ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালের পক্ষে ভোট দেন। যে কারণে সিনেটে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল বাতিল নিয়ে রিপাবলিকানেরা যে প্রস্তাব এনেছিল, তা ৫৫-৪৫ ভোটে খারিজ হয়ে যায়।
কিন্তু ভোটাভুটির ফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, সিনেটে এবারও ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা খুবই কঠিন হবে। কারণ, মার্কিন সংবিধান অনুসারে সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট পেলেই কেবল সিনেটে প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে। এর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু, অভিশংসন থেকে ট্রাম্পকে অব্যাহতি দেয় রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের অভিসংশনের বিচারের পক্ষে পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটর ভোট দিয়েছেন। কিন্তু, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে করতে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরের ভোট লাগবে। ফলে মূল প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময় রিপাবলিকান সদস্যেরা মতবদল না করলে ট্রাম্পকে করা যাবে না।
সিনেটে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সিনেটে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল বাতিল করা নিয়ে রিপাবলিকানদের প্রস্তাব গতকাল খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু রিপাবলিকানেরা দাবি করছেন, এই হার আসলে তাঁদের জয়। কারণ, রিপাবলিকান পার্টি দেখিয়ে দিতে পেরেছে, তাঁদের বেশির ভাগ সদস্যই ট্রাম্পের পাশে আছেন। ফলে শেষ পর্ষন্ত ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। মার্কিন সংবিধান অনুসারে, হাউসে কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে প্রস্তাব আনা যায় এবং সে প্রস্তাব পাস হলে বিচারের জন্য সিনেটে যায়। সিনেটের বিচারে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে সিনেটে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তা অনুমোদিত হতে হবে। তবে, রিপাবলিকানেরা একজোট হয়ে থাকলে ট্রাম্পকে বিচারের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
সিনেটে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল বন্ধ করার প্রস্তাব এনেছিলেন রিপাবলিকান সদস্য র্যান্ড পল। ভোটাভুটিতে ট্রায়াল বন্ধ না করা গেলেও পল বলেছেন, ‘এই হার আসলে জয়। আমাদের প্রস্তাবের পক্ষে ৪৫টি ভোট পড়া মানে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল অর্থহীন হয়ে গেল।’
পলের যুক্তি ছিল, ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই। তাই এখন তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যায় না কিংবা তা নিয়ে বিতর্ক করা যায় না।
ডেমোক্র্যাটেরা অবশ্য পলের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ক্যাপিটল নিয়ে যে অপরাধ করেছেন, তার জন্য তাঁর ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল করা যায়।
মার্কিন ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসন প্রস্তাব আনা নজিরবিহীন। এবং ক্ষমতা ছাড়ার পর কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন চেষ্টার ঘটনাও ঘটেনি।