শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হলো মহারাষ্ট্রে
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের ১৯ দিন পর মহারাষ্ট্রে জারি করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ও রাজ্যপালের সুপারিশে এই শাসন জারি করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সুপারিশে সই করেন রাষ্ট্রপতি। এর ফলে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সংবিধানের ৩৫৬ নম্বর ধারা কার্যকর হলো মহারাষ্ট্রে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে শিবসেনার সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ জানিয়েছিলেন মাহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি। এই মর্মে রাজভবন থেকে জারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রাজ্যপাল নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক উপায়ে মহারাষ্ট্রের সরকার চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না।
এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট ভগত কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি মহারাষ্ট্রে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা লাগুর সুপারিশ জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করে।
এ দিকে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু হওয়া রুখতে শিবসেনা সুপ্রিম কোর্টে শেষ একটি চেষ্টা চালিয়েছিল। শিবসেনাকে সরকার গঠনের জন্য দেওয়া সময় না বাড়ানোয় রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সেনা। শিবসেনার হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন অ্যাডভোকেট সুনীল ফার্নান্ডেজ। শিবসেনার পক্ষ থেকে এই মামলার দ্রুত শুনানিরও আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে সব চেষ্টা বিফলে যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের পর ফের মহারাষ্ট্রে জারি হলো রাষ্ট্রপতির শাসন। ২৪ অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর কেটে গেছে ২০ দিন। শিবসেনা ও বিজেপি জোট করে নির্বাচনে লড়াই করলেও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন।
৫০-৫০ শর্তে জোট হয়েছিল বলে মনে করিয়ে দেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। শিবসেনা দাবি করে, আড়াই আড়াই বছর করে দুদলের মুখ্যমন্ত্রী থাকবে মহারাষ্ট্রে। প্রথম পর্যায়ে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও আড়াই বছর পর তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে। আর সেটা লিখিত দিতে হবে বিজেপিকে। কিন্তু উদ্ধবের শর্ত মানতে রাজি হয়নি গেরুয়া শিবির। রাজ্যপালের কাছে গিয়ে হাত তুলে দেয় মোদির দল।
এনসিপি ও কংগ্রেসকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করে দেয় শিবসেনা। মোদি সরকারে শিবসেনার একমাত্র মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিয়ে তা স্পষ্ট করে দেয় তারা। সোমবার সন্ধায় রাজ্যপাল ভগতসিং কোসয়ারির সঙ্গে দেখা করে দুইদিন সময় চান আদিত্য ঠাকরেরা। কিন্তু সেই সময় দিতে চাননি রাজ্যপাল। কারণ, এনসিপি বা কংগ্রেসের সমর্থনপত্র দেখাতে পারেননি শিবসেনার প্রতিনিধিরা। এরপর এনসিপিকে ডেকে পাঠানো হয় রাজভবনে।
সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা শিবসেনার সঙ্গে জোট নিয়ে উৎসাহী। তবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চান সনিয়া গান্ধী। শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর আশঙ্কা, বিজেপি ও শিবসেনা স্বাভাবিক বন্ধু। ৩০ বছর ধরে তাঁদের জোট। ফলে উদ্ভূত সংঘাত সাময়িক হতে পারে। কিন্তু শিবসেনা ও কংগ্রেসের নীতি ভিন্নমেরুর। হিন্দুত্ববাদী দলের সঙ্গে হাত মেলালে কংগ্রেসের ‘সেকুলার ইমেজে’ লাগতে পারে ধাক্কা। সেটা ভালোমতোই বুঝেই রক্ষনার্থ খেলে যান কংগ্রেস সভানেত্রী।
মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট করে শিবসেনা পেয়েছে ৫৬টি আসন। এনসিপি ও কংগ্রেসের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৪। ১০৫টি আসন নিয়ে বৃহত্তম দল হয়েছে বিজেপি। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সরকার গঠনের জাদু সংখ্যা ১৪৫। কংগ্রেস, এনসিপি ও শিবসেনা জোট করে আসন দাঁড়াবে ১৫৪টি।