‘যুদ্ধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি’, করোনার ভয়াবহতার বর্ণনায় স্প্যানিশ সেবিকা
‘প্রতিদিন কাজে যাওয়া যেন যুদ্ধে যাওয়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন কাজে যাই আর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তখন ভয়, উদ্বেগ আর যন্ত্রণায় ভুগি। আক্রান্তরা নিরবেই মারা যাচ্ছেন। পরিবারকে পাশে পাওয়ার সুযোগও হচ্ছে না তাঁদের।’ মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখে কথাগুলো বলছিলেন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের প্রিন্সিপে দি আস্তুরিয়াস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সেবিকা কোরাল মেরিনো।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত থেকে নিজেদের জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছেন মেরিনোর মতো অনেক নার্স। আর তাই এ ভাইরাসের ভয়াবহতা খুব কাছ থেকেই দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মেরিনোর এমন অভিজ্ঞতার কথা।
মেরিনো বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা অনেক ঝুঁকিতে রয়েছেন। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা ব্যবস্থা।’
ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে অনেকটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মেরিনো বলেন, ‘সবার জন্যই এখন এটি কঠিন সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে তা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি কঠিন। নিয়মিত রোগীদের কাছাকাছি গিয়ে থাকতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিবার রোগী দেখার পর মাস্ক পরিবর্তন করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।’
অনেক কর্মীদের এক সঙ্গে কাজ থাকায় সহকর্মীদের ব্যবহৃত ভাইরাস প্রতিরোধক চশমাই আবারও ধুয়ে পরতে হচ্ছে নার্সদের। এর মধ্যে সেবা দিতে গিয়েও সহকর্মীদের আক্রান্ত হতে দেখেছেন মেরিনো।
মেরিনোর স্বামী রয়েছে, সন্তান রয়েছে। তিনি ভয়ে আছেন, যদি তাঁরও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, তাহলে পরিবার থেকে দূরে আলাদা কোনো জায়গায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে তাঁকে।
কোরাল মেরিনো বলেন, ‘আমি যখন বাসায় যাই, আমার প্রথম কাজ হলো গোসল করা। জ্বর-কাশি হবে কি না, এ নিয়ে আমি সবসময় ভয়ে থাকি। ভয়ে থাকি এই ভেবে যে আমাকে আইসোলশনেও থাকতে হতে পারে। ভয়ে থাকি ১৫ দিনের জন্য আইসোলেশনে থেকে আমার সন্তানকে চুম্বন করতে পারব কি না।’
করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো অনেক মানুষ সচেতন নয় দেখে ক্ষুব্ধ মেরিনো। তিনি বলেন, ‘আমি আমার চারপাশে দেখি, মানুষ এখনো অতটা সচেতন নয়। আর এ জন্য আমার অনেক রাগ হয়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে কিছু মানুষ সচেতন বলে আমি মনে করি না। আর এ জন্য বাড়িতে না থাকার ফলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
স্পেনে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪২ জনে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদ্রিদের বাসিন্দা। এদিকে সারা বিশ্বে দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সারি। ভয় আর যন্ত্রণা নিয়ে পরিবার ছেড়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন মেরিনোর মতো অসংখ্য কর্মী-চিকিৎসক।