ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসতে চান বাইডেন
অষ্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নতুন নিরাপত্তা চুক্তির জেরে দেশ তিনটির সঙ্গে ফ্রান্সের তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিত্রদেশ ফ্রান্সের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল রোববার ফ্রান্সের ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করে বলেছেন, ‘এটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো চুক্তি নয়। বিশেষ করে, আমাদের ফরাসি বন্ধুদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তো নয়ই।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ‘খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ রয়েছে, যার ‘গুরুত্ব অনেক’।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রতি আমাদের ভালোবাসার বন্ধন কখনও ভাঙার নয়।’
এদিকে, ফরাসি সরকারের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল আতাল বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছেন। ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে’ উভয়ের মধ্যে আলাপ হতে পারে বলে তিনি জানান।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি হয়। ‘এইউকেইউএস’ বা ‘অকাস’ নামের এই চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রযুক্তি সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
কিন্তু, এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের সাবমেরিন-সংশ্লিষ্ট চুক্তি হয়েছিল। যার আর্থিক মূল্য চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ফ্রান্স। এ ছাড়া দুই দেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার নতুন এই চুক্তির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে বিষয়টি জানানো হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ করেছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া গত শনিবার অভিযোগ করেছেন—পারমাণবিক সাবমেরিন বিক্রির চুক্তিকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যা বলে সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে। নতুন চুক্তির প্রতিবাদে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার দেশ দুটিতে নিযুক্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছিল ফ্রান্স। এরপর টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স-২-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটি ফ্রান্সের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমানজনক আচরণ করেছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া আরও বলেন, নতুন এই চুক্তি মিত্র দেশগুলোর সম্পর্কের মধ্যে ‘মারাত্মক সংকট’ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে আনলাম। এটি একটি গুরুতর রাজনৈতিক পদক্ষেপ।’
এদিকে, অস্ট্রেলিয়া মিথ্যা বলেছে বলে ফ্রান্সের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অসি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি গতকাল রোববার বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি—আমাদের কৌশলগত জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক বাতিল করেছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সূত্র জানায়, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলে এবং যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেসের মধ্যে দুদিনের ওই বৈঠক আপাতত হচ্ছে না।
এদিকে, বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন—অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ‘অকাস’ প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ব্যাপকভাবে চীনের উত্থানকে প্রতিহত করার লক্ষ্য হিসেবে দেখা যায়।
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ার করে বলেছে, ‘অকাস’ চুক্তিটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দিতে পারে।