মৃত্যুর পরেই জীবন, যে খুদে বার্তা হলো শিশুর জন্মের কারণ
বিয়ের কিছুদিনের মাথায় স্বামী জেরেমি কেহন্টের সঙ্গে গুরুগম্ভীর এক কথোপকথন হয় লেনি কেহন্টের। আলাপচারিতার বিষয় ছিল জেরেমির ধূমপান। স্বামী যেন বেশিদিন বাঁচেন, তাই লেনি চান জেরেমি ধূমপান ছেড়ে দিক।
নবোঢ়ার সঙ্গে ওই কথোপকথন জেরেমিকে বেশ ভাবায়। সে ভাবনা থেকেই স্ত্রীকে মোবাইলে একটি খুদে বার্তা পাঠান জেরেমি। ওই খুদে বার্তাই যে একটা সময় মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা ভাবতে পারেননি লেনি বা জেরেমি দুজনেরই কেউই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই এক গল্প।
লেনি-জেরেমি দম্পতি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। জেরেমিকে ধূমপান ছেড়ে দিতে নিয়মিত অনুরোধ করতেন লেনি।
২০১৬ সালের মে মাসে লেনিকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় জেরেমি প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি ধূমপান ছেড়ে দেবেন।
ওই খুদে বার্তায় স্ত্রীর কাছে আরেকটি অদ্ভুত আবদারও করেন জেরেমি।
জেরেমি লেখেন, ‘আমি যদি কখনো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে কোমায় চলে যাই কিংবা ব্রেইন ডেড হয়ে যাই, তাহলে আমাকে যন্ত্রের সাহায্যে বাঁচিয়ে রেখো, যত দিন না আমার জ্ঞান ফেরে। এবং আমার শুক্রাণু নিয়ে একটা মেয়েসন্তান জন্ম দিও। এর পর তুমি চাইলে পিছুটান ভুলে নিজের জীবনটা সামনে এগিয়ে নিতে পারো। না, মানে বললাম আর কী।’
লেনি তখন জানবেন কী করে যে কয়েক দিনের মধ্যে বাস্তবেই তাঁকে অমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।
জেরেমির কাছ থেকে খুদে বার্তা পাওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জেরেমি কেহন্টের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় জেরেমির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই স্বামীর পাঠানো খুদে বার্তার কথা মনে পড়ে যায় লেনির।
লেনি বলেন, ‘জেরেমি চলে যাওয়ার ধাক্কা শেষ হওয়ার আগেই স্বাভাবিকভাবে আমার ওই খুদে বার্তার কথা মনে পড়ে। আমার পাশে সে সময় মা, খালা ও এক বন্ধু ছিল। আমি তখনই তাঁদের জেরেমির পাঠানো খুদে বার্তাটি দেখাই এবং জানাই যে আমি জেরেমি যেভাবে বলেছে, সেভাবে চেষ্টা করে দেখতে চাই।’
কিন্তু ততক্ষণে জেরেমির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। লেনি তখনো নিশ্চিত ছিলেন না, স্বামীর শরীর থেকে শুক্রাণু নেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।
সে সময় ইউরোলজিস্ট ক্যাপি রথম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন লেনি।
কিন্তু চিকিৎসক রথম্যানও নিশ্চিত ছিলেন না, জেরেমির দেহ থেকে শুক্রাণু নিয়ে আসলেই কার্যকরভাবে তা লেনির ডিম্বাণুতে প্রবেশ করিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে কি না।
রথম্যান বলেন, ‘শুক্রাণু ৩২ বছর সংরক্ষণ করে রাখার পরও তা থেকে সন্তান জন্ম নিতে পারে; কিন্তু ৩৬ ঘণ্টা আগে মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু কতটা কার্যকরভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল আমার।’
‘মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বীর্য নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় না। আমরা চাইলে বীর্য বের করে এনে সংরক্ষণ করতে পারি,’ যোগ করেন রথম্যান।
অবশেষে জেরেমির মৃত্যুর ৪৪ ঘণ্টা পর তাঁর শরীর থেকে বীর্য নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু তাঁর শুক্রাণু তখনো জীবিত রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন সবাই।
সন্দেহের অবসান ঘটে জেরেমির মৃত্যুর ১১ মাস পর, যখন লেনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
জেরেমির মৃত্যুর দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো তাঁর শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যদি ভবিষ্যতে লেনি আবার জেরেমির সন্তানের মা হতে চান, তাহলে ওই শুক্রাণু ব্যবহার করা যাবে।