মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান
রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য মিয়ানমার সরকারের জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ফরটিফাই রাইটস।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও অভ্যন্তরীণ সরকারি দলিলাদিসহ ফরটিফাই রাইটসের সংগৃহীত নতুন প্রমাণগুলো নিশ্চিত করে যে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বাধ্য করছে যা কার্যকরভাবে রোহিঙ্গাদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার ছিনিয়ে নেয়। আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ফরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘এনভিসি একটি আপত্তিজনক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং সরকারের উচিত অবিলম্বে এটি বাতিল করা। নতুন প্রমাণ নিশ্চিত করে যে, রোহিঙ্গাদের পরিচয় মুছে ফেলা এবং তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব অস্বীকার করার চলমান প্রচেষ্টার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত।’
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের এনভিসি মেনে নিতে জোর বা বাধ্য করা হচ্ছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক এমন পাঁচটি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার নিশ্চিতে কাজ করা ফোরটিফাই রাইটস।
এর আগে দুটি আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
গত মঙ্গলবার সংস্থাটির ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিচারের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দমনমূলক ফৌজদারি আইনের ব্যবহার বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তমত প্রকাশ এবং সমাবেশের অধিকারও অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
সংগঠনটির এশিয়ার উপপরিচালক পিল রবার্টসন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার বিষয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায়বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।’
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া। অভিযোগের জবাব দিতে মিয়ানমার ১০-১২ ডিসেম্বর আইসিজেতে হাজির হয়েছিল। সেখানে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
এ ছাড়া এখনো মিয়ানমারে থাকা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা মারাত্মক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে। সরকারের নিপীড়ন, সহিংসতার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা এবং বঞ্চনার শিকার হচ্ছে তারা।
এদিকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ আগামী ২৩ জানুয়ারি দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার এক টুইটে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গাম্বিয়ার বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলাটি করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলা করা গাম্বিয়া মিয়ানমারের গণহত্যার আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জরুরিভাবে আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানায়।