ভারতে নারী পৌরকর্মীদের ‘লজ্জাজনক’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার অভিযোগ
ভারতের গুজরাটের ভুজ শহরের একটি কলেজের আবাসিক ছাত্রীদের পিরিয়ড (মাসিক) হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ছাত্রীদের পরিধেয় পায়জামা ও অন্তর্বাস পরীক্ষা করা হয়েছে বলে চলতি মাসের শুরুর দিকে অভিযোগ উঠেছিল। সেই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এলো আরো একটি গুরুতর অভিযোগ। এবারও ঘটনাস্থল সেই গুজরাট। একসঙ্গে নগ্ন করে কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভিযোগ উঠেছে সুরাট মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের বিরুদ্ধে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সুরাট মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কর্মচারী সংগঠন অভিযোগ জানায়, করপোরেশনে নারী শিক্ষানবিশ কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক ফিটনেস ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে লজ্জাজনক, অশালীন ও অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় এক কক্ষে একসঙ্গে ওই নারীদের নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। সে সময় সেখানে নারীদের জন্য ন্যূনতম গোপনীয়তার ব্যবস্থা ছিল না। যে কক্ষে ওই পরীক্ষা চলছিল, সেখানে আড়ালের ব্যবস্থা বলতে ছিল কেবল একটি পর্দা।
কর্মচারী সংগঠনের অভিযোগ, অবিবাহিত কর্মচারীদের পরীক্ষার সময় অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্নবাণেও জর্জরিত করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। অবিবাহিত কর্মচারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁরা আগে কখনো গর্ভবতী হয়েছেন কি না। এমনকী কর্মচারীদের বিতর্কিত টু-ফিঙ্গার টেস্টও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেদিনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত থাকা এক পৌরকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি জানান, সুরাট মিউনিসিপ্যাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে গিয়ে প্রায় ১০০ জন নারীকে অস্বস্তির অবস্থার মুখে পড়তে হয়। এক এক করে ডেকে ওই পৌরকর্মীদের একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে পরিধেয় পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়। একসঙ্গে ১০ জন করে নারীকে নগ্ন করে পরীক্ষা করছিলেন চিকিৎসক।
এ ছাড়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রুক্ষ ও রূঢ় ব্যবহারেরও অভিযোগ তুলেছেন পৌরকর্মীরা। এমন বিতর্কিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু নারী কর্মচারীদেরই করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। পুরুষদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং চোখ-কান-গলার পরীক্ষাসহ রক্তচাপ ও সুগার টেস্ট করা হয়।
এদিকে এ ঘটনা সামনে আসতেই উঠেছে বিতর্কের ঝড়। সুরাট মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কর্মচারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শেখ অভিযোগ করেন, ‘তিন বছর শিক্ষানবিশকালের সময় পূর্ণ করে চাকরিতে স্থায়ী হতে গেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও, নারীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার এমন পদ্ধতি অত্যন্ত আপত্তিকর। গর্ভবতী কি না জানতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এর বিরোধিতা করছি।’
অভিযোগ পেয়ে সুরাট মেয়র জগদীশ প্যাটেল দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ঘটনার তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের ভুজ শহরের একটি কলেজের আবাসিক ছাত্রীদের মাসিক হয়েছে কি না, নারী শিক্ষকরা তা পরীক্ষা করে দেখেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হোস্টেলের ৬৮ ছাত্রীকে ক্লাস থেকে টেনে বাথরুমে নিয়ে পরীক্ষা করা হয় বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেন।