ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৪
ভারতে আরো তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে দাঁড়াল। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন লাদাখ ও একজন তামিলনাড়ু রাজ্যের বাসিন্দা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু গতকাল শনিবার এ খবর জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাদাখে করোনা আক্রান্ত দুজন সম্প্রতি ইরান ভ্রমণ করেছিলেন। এ ছাড়া তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত একজন সম্প্রতি ওমান ভ্রমণ করেছিলেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত কাঞ্চিপুরমের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি চেন্নাইয়ের রাজীব গান্ধী সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওমান থেকে দেশে ফেরার পর যখন তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয়, তখন তাঁকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে পরীক্ষা করার পর গতকাল শনিবার তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভুটানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর জানা যায়, ওই দুই মার্কিন নাগরিক এর আগে ভারতের বেশ কয়েকটি স্থান ভ্রমণ করেছিলেন। ভারতে তাঁরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৫০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রে গতকাল শনিবার দুজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এক ইতালীয় পর্যটকের সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ওই দুজন। এদিকে ওই ইতালীয় পর্যটক নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী আলি ওয়াহিদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই দুই ব্যক্তি একটি রিসোর্টের কর্মী। তাঁদের এখন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।’
বিশ্বের ৯২টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা।
চীনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এ রোগ দ্রুতগতিতে ছড়াতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রতিদিন বাড়ছে প্রাণহানি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৮ জনে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাতিল করা হয়েছে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বের অন্যতম বড় সংগীত উৎসব।
এদিকে, ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৮৩ জনে। চীনের পর ইতালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন।
ইরানে সরকারি হিসাবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮২৩ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে কাগজের টাকার ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২০ মার্চ ফার্সি নতুন বছর নওরোজ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনের পরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। দেশটিতে দ্রুতগতিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৩৪ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
করোনার এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এ বিষয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস আধানম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমরা এ ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ৪০ ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট ও ২০ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষের দিকে। তারপরও সব দেশকে বলব, আপনারা এই রোগের সংক্রমণ ঠেকানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।’
করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ ফ্লাইট বাতিল করায় বিশ্বব্যাপী পর্যটনশিল্পেও ধস নেমেছে।